কুষ্টিয়ায় মেঘলা খাতুন (১৬) নামে এক পরীক্ষার্থী সন্তান জন্ম দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। ঘটনাটি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। শহরের পূর্ব মিলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই শিক্ষার্থীর মনোবল দেখে অনেকেই তার প্রশংসা করেছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৫ মার্চ মেঘলা খাতুনের বিয়ে হয়। তার স্বামী আল আমিন একটি কারখানায় দিনমজুরের কাজ করেন। মেঘলা কুষ্টিয়া শহরের আলাউদ্দিন আহামেদ ক্যাডেট স্কুল থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।
এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলে গর্ভের সন্তান নিয়েই শহরের চর মিলপাড়া এলাকায় বাবা-মার বাড়িতে থেকে সে পরীক্ষায় অংশ নেয়। মঙ্গলবারের (২০ সেপ্টেম্বর) ছিল ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা। কিন্তু ভোর হতে না হতেই তার প্রসব ব্যথা শুরু হয়। এ অবস্থায় সকাল ৭টার দিকে পরিবারের লোকজন শহরের পূর্ব মিলপাড়ায় অবস্থিত নগর মাতৃসদন হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রসূতি ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করে। এরপর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্বাভাবিকভাবে মেঘলা ফুটফুটে এক ছেলের জন্ম দেয়। সন্তান জন্মের পর মেঘলা খাতুন শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করলে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করে। সদ্যভূমিষ্ট নবজাতককে হাসপাতালে স্বজনদের কাছে রেখে অদম্য মনোবল নিয়ে সে ছুটে যায় শহরের কুষ্টিয়া হাইস্কুল পরীক্ষাকেন্দ্রে।
মেঘলার অদম্য মনোবল আর সাহস দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে তাকে পরীক্ষার হলে নামিয়ে দিয়ে আসে। মেঘলা খাতুন বলে, আমি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও এখানকার চিকিৎসকসহ স্টাফরা আমাকে মানসিক সাহস যুগিয়েছেন। এখানকার সেবার মান অনেক ভালো হওয়ায় নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে পেরেছি এবং সন্তানকে রেখে পরীক্ষা দিতে পেরেছি। হাসপাতালের চিকিৎসক সুমাইয়া শারমিন বন্যা বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর আমরা মেঘলা খাতুনকে শারীরিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি সে সুস্থ রয়েছে। তাই তার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে আমাদের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে পরীক্ষার হলে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। হাসপাতালের প্রজেক্ট ম্যানেজার রাহেলা পারভিন বলেন, মেঘলার মতো অদম্য মনোবল নিয়ে লড়াই করা মেয়ের সংখ্যা খুবই কম। আমরা তার মনোবল দেখে বিস্মিত হয়েছি।