নাম আলোক হাসপাতাল। বাস্তবে সব বিপরীত কর্মকাণ্ড। আলোকের আলো বলতে তেমন কিছু নেই। পদে পদে আছে প্রতারণার ফাঁদ। সুস্থ হলেও সমস্যা নেই। যে কেউ চাইলেই ভর্তি হতে পারবেন। এরপর শুরু হবে পকেট সাবাড় করার ফর্মুলা। রোগীকে বলা হবে, বেডে শুয়ে পড়েন। আপনার অবস্থা তো খুবই খারাপ। অনেকগুলো টেস্টের ফর্দ ধরিয়ে দিয়ে বলা হবে, সময় কম। দ্রুত টেস্ট করাতে হবে। এমন সব বিস্ময়কর তথ্যপ্রমাণ মিলেছে যুগান্তরের অনুসন্ধানে। রোগী সেজে প্রতিবেদক নিজেই ভর্তি হয়ে এমন সব তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন।
এছাড়া ভুল রিপোর্ট দেওয়াসহ নানাভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানি করার একাধিক কেস স্টাডি মিলেছে এই অনুসন্ধানে। এদিকে হাসপাতালটির গোড়ায় গলদ। রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত আলোক হাসপাতালটির বিশাল সাইনবোর্ডে লেখা ১৩০ বেডের অত্যাধুনিক হাসপাতাল। অথচ অনুমোদিত লাইসেন্স ৫০ বেডের। অর্থাৎ নামের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে প্রতারণা। এখানেই শেষ নয়, বর্তমানে হাসপাতালটির আইনগত কোনো বৈধতাও নেই। কারণ, গেল ৩০ জুন লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। শর্তপূরণ করতে না পারায় লাইসেন্স নবায়নও হচ্ছে না। অথচ খোদ রাজধানীতে সবার চোখের সামনে দিব্বি এমন একটি অবৈধ হাসপাতাল রোগী সেবার নামে চুটিয়ে প্রতারণার ব্যবসা করে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী মহল এবং সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, শুধু আলোক হাসপাতাল নয়, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের বহু হাসপাতাল-ক্লিনিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে। অনুসন্ধানের প্রথম পর্বে আজ থাকছে আলোক হাসপাতালের সদর-অন্দরের চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য-উপাত্ত।
রোগী সেজে ৫ ঘণ্টা : ১২ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকাল ৪টা। প্রতিবেদক রোগী সেজে ভর্তি হন মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে অবস্থিত আলোক হাসপাতালে। হাসপাতালের জরুরি কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করছেন সদ্য ছাত্রজীবন শেষ করা এক তরুণ চিকিৎসক। নাম ইসতিয়াক ইসলাম। তার কাছে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তির ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিক প্রেসার এবং রক্তের গ্লুকোজ মাপার ব্যবস্থাপত্র দেন। কিন্তু সবকিছুই স্বাভাবিক। এ সময় চিকিৎসক বলেন, ‘আপনি চাইলে ভর্তি হতে পারেন। আমরা পর্যবেক্ষণে রাখব।’ মোবাইল ফোনে কল করলেন সাইফুল ইসলাম নামের ডাক্তারকে। তার পরামর্শে ইসিজি, ইকো এবং রক্ত পরীক্ষাসহ ছয়টি পরীক্ষার লিস্ট ধরিয়ে দেওয়া হলো। টাকা জমা দিতে কাউন্টারে দাঁড়াতেই এগিয়ে এলেন সানাউল্লাহ নামের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, ওষুধ ও চিকিৎসকের ফি ছাড়া কেবল বিছানা ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বাবদ দৈনিক ৪ হাজার টাকা দিতে হবে। এছাড়া খরচের একটি অংশ আগাম জমা রাখা বাধ্যতামূলক।