কৃষি অর্থনীতিবিদ ও খাদ্যনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. গোলাম রসুল। তিনি বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকার অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক খাদ্যবাজারে তৈরি হওয়া অস্থিরতা নিয়ে তিনি দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন।
গোলাম রসুল : বিভিন্ন কারণে আমাদের ফুড সাপ্লাই চেইনের ওপর যে প্রভাব পড়েছে তার জন্য বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জলবায়ু, মহামারী, যুদ্ধ সবগুলোই কারণ। তবে কভিডের কারণে, বাংলাদেশে খাদ্য নিয়ে বেশি একটা নেগেটিভ প্রভাব পড়েনি, পড়েছিল আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে। কিন্তু বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশে^র খাদ্য পরিস্থিতি একটা সিচুয়েশনে পড়ে গিয়েছে। দেশ দুটি বিশ্বে গমের একটা ভালো সাপ্লাই দেয়। আমাদের গম আমদানির প্রায় ৫০/৬০ ভাগই আসত মনে হয় এই দুই দেশ থেকে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে এই সোর্সটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সারা বিশ্বের খাদ্য ব্যবস্থাপনা একটা ঘোলাটে সিচুয়েশনের মধ্যে পড়ে যায়। গ্লোবাল মার্কেটটা অস্থির হয়ে যায়। এটা দেখে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়া গম রপ্তানিতে একটা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তার ফলে খাদ্য আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের জন্যও এটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
জলবায়ুর কারণেও খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে অনেক দেশে। বিশে^ সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে চীন, সেকেন্ড ভারত, বাংলাদেশ থার্ড। এবার আবহাওয়ার কারণে এই দুই দেশেই ধান উৎপাদন কম হয়েছে। যেটার প্রভাব খুব শিগগিরই গ্লোবাল মার্কেটে পড়বে বলে মনে হচ্ছে। তারপর ইউরোপে কিন্তু ব্যাপক খরায় গমসহ ফসল উৎপাদনের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। জার্মানি, ইতালিতে গম উৎপাদন এবং স্পেনে ফসল উৎপাদন কম হয়েছে। তারপর পাকিস্তানে বন্যা হয়ে গেল। পাকিস্তানে গম বেশ উৎপাদন হয়, সেখানে সমস্যা মানে সেটা গ্লোবাল মার্কেটকে ডিস্টার্ব করে। বাংলাদেশেরটা যদি খেয়াল করি এ বছর মুনসুন সিজনটা কিন্তু আমরা ফিল করিনি। এ বছর বর্ষাকালে আমরা বৃষ্টিই দেখিনি। বৃষ্টির অভাবে আমাদের কৃষকরা আমন ধান চাষ করতে পারছেন না। আমার বয়স ৬০ এর কাছাকাছি, আমার জীবনে আমি এত বড় খরা দেখিনি, বর্ষাকালে বৃষ্টিই নেই। কৃষকরা একটা বিপদের মধ্যে আছেন আমন চাষ নিয়ে। আর্লি মুনসুনে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা বেল্টে যে বন্যা হয়েছিল তাতে বোরো ধান এফেক্টেড হয়েছে। আমাদের আউশ ধানটাও এবার তেমন ভালো হয়নি। এই সবগুলোই কিন্তু ক্লাইমেট চেঞ্জের প্রভাব। সব মিলিয়ে গ্লোবাল ফুড মার্কেট একটা রিস্কের মধ্যে আছে।