গণতন্ত্র নিয়ে কথা উঠলেই দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে অবধারিতভাবে উচ্চারণ করা হয়, ‘নির্বাচন’ শব্দটি। নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলেও এটিই সব নয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একেবারে কেন্দ্রের বিষয়। এ জন্যই আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘গণতন্ত্রের জন্য সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষা’।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস আজ। ২০০৭ সাল থেকে দিনটি পালন করে আসছে জাতিসংঘ। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এবার দিবসটি পালিত হচ্ছে।
দিবসটি নিয়ে এবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনা সংকট সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছে বিশ্বের গণতন্ত্রের নীতিগুলোও ক্রমাগত হুমকির মধ্যে পড়ছে। গণতন্ত্র আগের চেয়ে অনেক বেশি পিছিয়ে গেছে। নাগরিক পরিসর সংকুচিত হচ্ছে এবং অবিশ্বাস, ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের জন্ম হচ্ছে। একই সঙ্গে সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের স্বাধীনতার প্রতি হুমকিও বাড়ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এবার গণতন্ত্র দিবসে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। যদিও দেশে গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা এখন নির্বাচন ও ভোটাধিকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এ জন্য অবশ্য অনেকে গত দুটি জাতীয় নির্বাচনকে দায়ী করেন। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন গণতন্ত্রের একটা অংশ। মানে, জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে, সেটার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র না। গণতন্ত্রের বিষয়টা আরও প্রসারিত। গণতন্ত্রের সংজ্ঞার মধ্যে আছে—এক. সব নাগরিকের অধিকার ও সুযোগের সমতা থাকবে। অধিকার শুধু না, সুযোগও থাকতে হবে; দুই. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে হবে এবং তিন. সর্বস্তরে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই তিনটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ।’
দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ জন্য স্বাধীন সংবাদমাধ্যম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত। তবে দেশে বিদ্যমান ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ (আইসিটি) সাংবাদিক নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও কথা বলেছে।