আজও পশ্চিমবঙ্গের আদি ভূমিপুত্র বাঙালিরা পূর্বঙ্গীয়দের ‘খাঁটি বাঙালি’ বলে মানে না, বিশ্বাসও করে না। তাদের চোখে তারা ‘বাঙাল’। শব্দটি বাঙালি শব্দের অপভ্রংশ বা অপভ্রষ্ট। ভোটের রাজনীতিতে উদ্বাস্তু বাঙালরা আজ বাঁদর নাচের বাঁদর। ওদের বাইরে কিছু আদি ছদ্মবেশী বাঙাল রয়েছে। এদের পূর্বপুরুষরা ঔপনিবেশিক শহর কলকাতায় এসেছিল পেটের দায়ে। ইংরেজের চাকর-নকর কিংবা ফটকাবাজি-দালালি করত তারা। তারা কিছুতেই স্বীকার করতে চায় না তাদের পূর্বপুরুষ ইংরেজ জাহাজ কোম্পানির খালাসি হয়ে ঢাকা, নোয়াখালী, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা এসেছিল। এর উল্টোটাও ঘটেছে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে।
উত্তর প্রদেশ এবং দিল্লির ভাগ্যান্বেষী অবাঙালি কিছু হিন্দু-মুসলমান পূর্ববঙ্গের নানা অঞ্চলের ছোট-বড় জমিদার হয়ে বসে। সমাজ বাস্তবতার কারণে তারা খানিকটা বাঙালিও হয়ে ওঠে। অভিজাত! বনেদি! বা খান্দানি বাঙালি! পরে পূর্ববঙ্গে সাতচল্লিশ-পূর্ব অধ্যায়ে ওরা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ রাজনীতির তৎপরতায় যুক্ত হয়ে পড়ে। পূর্ববঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তাদের দ্বারাই পুষ্টি লাভ করে। বাইরে বাঙালি, ভেতরে হিন্দি বা উর্দুভাষী দিল্লিওয়ালা, লক্ষেèৗওয়ালা, পূর্ববঙ্গের ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইংরেজ তৈরি জমিদারদের নিয়ে চিত্তাকর্ষক আখ্যান মেলে ইতিহাসে। কিংবদিন্তও প্রচলিত আছে নানা অঞ্চলে।