একটি নদী কোনো বিচ্ছিন্ন সত্তা নয়। প্রতিটি নদী তার উৎস থেকে শেষ গন্তব্যস্থলে পৌঁছার পথে অনেক জনপদ, ভূমিরূপ, জলাভূমি, গাছগাছালি, বাস্তুতন্ত্র, শ্যাওলা, মাছ, বিভিন্ন ধরনের প্রাণী, প্লাবনভূমি ও শস্যক্ষেত্র অতিক্রম করে এবং তাদের সঙ্গে পরস্পর নির্ভরশীল মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়ে নিজেও বিবর্তিত হয় এবং সেইসব উপাদানকেও প্রভাবান্বিত করে। সেই অর্থে প্রত্যেকটি নদীই এক একটি জীবন্ত সত্তা।
নদী কেবলই পানি বহনকারী কোনো পাইপলাইন নয়। একটি নদীর পানির পরিমাণ, পানিবহন ক্ষমতা, নাব্য এবং পানির গুণগত মান নির্ভর করে সেই নদীর অববাহিকা অঞ্চলের ক্রিয়াকলাপ, ঋতুভেদে বিদ্যমান আবহাওয়া এবং সার্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা এবং ধরনের ওপর। প্রাকৃতিকভাবে প্রতিটি নদীই তার বিভিন্ন অংশের প্রস্থ, গভীরতা এবং স্রোতের বেগ আর সেই অংশের মাটি, পলি, শিলা, ভূমিরূপ ও ভূমি ব্যবহারের সঙ্গে সংগতি রেখে একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থা তৈরি করে নেয়। কিন্তু মানুষ যখন তাদের প্রয়োজনে নদীর সেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় তখন নদীও তার প্রয়োজনে নিজের গতিপথ এবং আচরণ পরিবর্তন করে নেয়। যেকোনো নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য সেই নদীর উৎস থেকে গন্তব্যস্থল পর্যন্ত অববাহিকা অঞ্চলের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ আমলে নিয়ে পরিকল্পনা নেওয়াই বিজ্ঞানসম্মতভাবে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি।