চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ডলুখালে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেড় কোটি টাকায় নির্মিত বেড়িবাঁধ ছাড়াও পরিবেশের ক্ষতিসহ সেখানকার অন্তত ১০ হাজার বাসিন্দা হুমকির মুখে পড়েছেন বলে যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উদ্বেগজনক হলো, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও বালু উত্তোলনের কাজ বন্ধ হয়নি। জানা যায়, কাগজে-কলমে ইজারাদার একজন হলেও তাকে নামমাত্র টাকা দিয়ে সরকারদলীয় ২০-২৫ জনের একটি সিন্ডিকেট এখানে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্ধারিত আয়কর ও ভ্যাটসহ ৫ লাখ টাকা পরিশোধসাপেক্ষে জেলা প্রশাসন আবুল কাসেম চৌধুরীকে এখানে ‘একসনা’ লিজ দেয়। তবে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ইজারাকৃত স্থানের সীমারেখা লঙ্ঘন করে এর বাইরে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বালু উত্তোলনকালে ডলুখালে জেগে ওঠা চর, খালের পাড়, পাহাড়ি টিলা ইত্যাদি ‘এক্সকেভেটর’ দিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, পুকুরের মতো গভীর গর্ত করে যেভাবে এখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, তাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে জনপদ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না।
এ কথা সত্য, সব নিয়মকানুন মেনে প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধের পর জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে বালুমহাল ইজারা নেওয়া হয়েছে। এর মানে, আপাতদৃষ্টিতে এখানে আইনি কোনো জটিলতা নেই। আমাদের প্রশ্ন অন্য জায়গায়। ভাঙনের হাত থেকে জনপদ রক্ষায় সরকার দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে যে বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করেছে, এখানে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে এলাকাবাসী এর কোনো সুফল পাবে না; উপরন্তু এটি পরিবেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। তাহলে শেষমেশ হিসাবটা কী দাঁড়াল? জেলা প্রশাসন সরকারের রাজস্ব ভান্ডারে ৫ লাখ টাকা যোগ করল বটে; কিন্তু এ কাজের মধ্য দিয়ে তারা অনেকগুণ বেশি সরকারি অর্থ অপচয়ের ক্ষেত্র ছাড়াও জনস্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে হতাশাজনক। বস্তুত এ বালুমহাল ইজারা দিয়ে জেলা প্রশাসন কাদের স্বার্থরক্ষা করেছে, খতিয়ে দেখা জরুরি। স্থানীয় সংসদ-সদস্যসংশ্লিষ্ট লোকজনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী এ সিন্ডিকেটের বেপরোয়া হয়ে ওঠার অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের উচিত, অবিলম্বে এখানকার অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া।