পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসিক সমস্যা ও সংকট দীর্ঘদিনের। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, নতুন বিভাগ খোলা এবং গণহারে সরকারি ও বেসরকারি কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু এ সমস্যা ও সংকট আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। একসময় হাতে গোনা কয়েকটি কলেজে এই কোর্সগুলো চালু ছিল। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলে দুই শরও বেশি কলেজে উপরোক্ত কোর্সগুলো চালু আছে।
এর সঙ্গে রয়েছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, যাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোনো আবাসিক ব্যবস্থা নেই। শিক্ষাকে বেসরকারীকরণ করার ফলে টেকনিক্যাল শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ইনস্টিটিউটও কম নয়। ফলে চাপ বাড়ছে মেস ও বাসাবাড়ির ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ, কলেজ ও ইনস্টিটিউট আমরা তৈরি করছি; কিন্তু তাদের থাকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে আমরা সফল হতে পারিনি। গুণগত শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও মানসিক বিকাশের জন্য উন্নত পরিবেশ যে দরকার তা আমাদের কাছে অনেক উপেক্ষিত। আমরা শিক্ষার্থী ভর্তি করি এবং যেভাবেই হোক মেস বা অন্য জায়গায় থেকে শিক্ষা শেষ করে তারা বেরিয়ে যায়। আমাদের দায় এখানে অনেক কম। অথচ একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আমরা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে পারি। যারা বর্তমানে আবাসিক হলে থাকছে তাদের একটু ভালো পরিবেশ দিতে আমাদের সমস্যা কোথায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন আমাকেও আবাসিক হলে থাকতে হয়েছিল। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তখনকার সময়ের অনেক গরমিল রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মেধা ও প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণের মধ্য দিয়ে হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া হতো। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই নিজ নিজ সিটে উঠতে পারত। আবাসিক শিক্ষকরা নিয়মিত না হলেও মাঝেমধ্যে রুমগুলো ভিজিট করতেন। ফলে বহিরাগতরা ভয়ে থাকত। হলে তাদের অবস্থান রোধ করার জন্য এ ব্যবস্থা। হলে কারো অতিথি এলেও আমরা ভয়ে থাকতাম। আমরা যারা মফস্বল থেকে এসেছিলাম, তারা সবাই হলে আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে থাকতাম। কারো সঙ্গে বেড শেয়ার করলেও দ্বৈতাবাসিক অনুমোদন নিয়ে থাকতে হতো। এর জন্য সমপরিমাণ সিট ভাড়া প্রদান করতে হতো। মোটকথা, হলের নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের কাছে। কিন্তু এখনকার চিত্র অনেকটা ভিন্ন। পত্রিকায় প্রকাশ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ এখন আর তাঁদের কাছে নেই। ফলে দেখা যায়, একজন দরিদ্র শিক্ষার্থী, যার হলে থাকা জরুরি সে হয়তো হলে থাকতে পারছে না। অধিকন্তু যার প্রয়োজন নেই সে হলে থাকছে। শুধু তা-ই নয়, যারা থাকছে তাদের বিভিন্ন সময় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। হলে অবস্থান করে বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশে যেতে হতো; কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো মানসিক যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা কখনো ছিল না।