ঘর নেই। মাথা গোঁজার অবলম্বন বলতে পদচারি সেতু। খাবার জোটে মানুষের কাছে হাত পেতে আর বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে। রাজধানীতে চার সদস্যের এই পরিবারের দিন কাটছে এভাবে।
ভিক্ষা আর ময়লা ফেলে তাদের যে আয় হয়, তা দিয়ে সবার জন্য পর্যাপ্ত চাল কেনা যায় না। এর সঙ্গে ব্যঞ্জন যোগ করা তো দূরের কথা। তাই পথ একটাই। একবেলা ভাত রেঁধে পান্তা করে দুই দিন ধরে খাওয়া।
অর্ধাহারের কষ্টে ভোগা এই পরিবারের জন্য গত রবিবার দিনটি ছিল কিঞ্চিৎ স্বস্তির। আজিমপুর কবরস্থানে এক মৃত ব্যক্তির চল্লিশা যাপন উপলক্ষে একবাটি বিরিয়ানি জুটেছিল তাদের। চারজনে মিলে ভাগাভাগি করে তা খেয়ে বৈচিত্র্যের স্বাদ পেয়েছে।
আগে তারা পুরান ঢাকার শহীদ নগরে একটি বস্তিতে ভাড়া থাকত। মহামারি করোনা আর নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি তাদের পথে নামিয়েছে। বস্তি ছেড়ে এখন আশ্রয় নিয়েছে আজিমপুর সরকারি গার্লস স্কুলের সামনের পদচারি সেতুর নিচের সড়ক বিভাজকে।
গতকাল দুপুর ১টার দিকে সেখানে দেখা হয় পরিবারটির সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য রহিমা বেগমের (৬০) সঙ্গে। এর মধ্যেই বেশ খানিকটা এলাকা চষে এসেছেন। জুটেছে কিছু ভিক্ষার টাকা। একটা বস্তায় কুড়িয়ে এনেছেন কিছু প্লাস্টিকের বোতল। এগুলো বিক্রি করেও যিকঞ্চিৎ জোটে।
রহিমা বেগম বলেন, ‘সকালে একজন জুস দিছিল, খাইছি। রাইতে চারজনে একথাল পান্তা খাইছি। একবেলা ভাত রানলে দুই দিন পান্তা কইরা খাই। ইট দিয়া চুলা বানাইয়া রান্না করি। ’
মহামারি করোনা-পরবর্তী কঠিন সময়ে নিরুপায় রহিমা খাবার জোগাতে আজিমপুর কবরস্থান, মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সামনে ভিক্ষা শুরু করেন। কোনো কোনো রাতে এই সেতুর নিচেই ঘুমিয়ে পড়তেন। মহামারির পর বস্তির ভাড়া বাড়লে তাঁর মেয়ে হুসনা, জামাতা জাকির ও তাঁদের দুই মেয়ে ফাতেমা ও আয়েশাকে নিয়ে চলে আসেন এখানে।
জামাতা জাকির বিভিন্ন বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহের কাজ করে যে টাকা পান, এতে সবার খাবারের জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। এ জন্য ১৬ বছর বয়সী বড় মেয়ে ফাতেমাকে নোয়াখালীতে দাদার বাড়িতে রেখে এসেছেন। আট বছর বয়সী ছোট মেয়ে আয়েশা মাঝেমধ্যে মানসিক প্রতিবন্ধী মা হুসনার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। কখনো আবার নানি রহিমার সঙ্গে ভিক্ষা করেন। মানুষজনের কাছে চেয়ে, নামেমাত্র খেয়ে দুজনে সকাল পার করেন। ভাতের দেখা মেলে সন্ধ্যায়।