১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো-১১ মিশনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মানুষের পদচিহ্ন পড়েছিল চাঁদের বুকে। এরপর অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে চাঁদে পড়েনি মানুষের পা। এবার আর্টেমিস মিশনে ফের চাঁদে যেতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য বেশ কয়েকটি মিশনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে দেশটি। মিশন বাস্তবায়নে কাজ করছে মহাকাশ গবেষণা নাসা। এবার প্রথম চাঁদে নামবেন, তিনি হচ্ছেন কৃষ্ণাঙ্গ নারী জেসিকা ওয়াটকিনসই। তিনিই প্রথম নারী যিনি ২০২৫ সালে চাঁদের মাটিতে নামতে যাচ্ছেন। নাসা জানিয়েছে প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাওয়াও হবে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারীর রেকর্ড। জেসিকা একজন ভূতত্ত্ববিদ। তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক করার পর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ও লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে সৌরবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। ২০১৭ সালে তিনি নভোচারী হিসেবে নাসায় যোগ দেন এবং সাফল্য দেখান। তার সঙ্গে যে পুরুষ নভোচারী চাঁদে নামবেন তিনি হবেন চাঁদে নামা ১৩তম নভোচারী।
চাঁদে মানুষের পা রাখার বহু আগে থেকেই চন্দ্রাভিযান শুরু হয়েছিল। চাঁদের মাটিতে মহাকাশযান প্রেরণের চেষ্টা করেছিল প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৫৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঠানো মহাকাশযান লুনা ২-ই ছিল চাঁদে মানুষের পাঠানো প্রথম কোনো বস্তু। যদিও তা আছড়ে পড়েছিল। এরপরে ১৯৬৬ সালেও একবার সোভিয়েত রাশিয়ার পক্ষ থেকে চাঁদের বুকে অবতরণ করেছিল লুনা-৯। দুটি মহাকাশযানেই সমাজতন্ত্রী রাশিয়ার পতাকা ও প্রতীক লাগানো ছিল। ফলে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এরপরেই একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। ১৯৭০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পাঠানো লুনা-১৬ মহাকাশযানই প্রথম অপরিশোধিত চাঁদের মাটির নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। এরপরে ১৯৭২ সালে লুনা-২০ এবং ১৯৭৬ সালে লুনা-২৪ নভোযানও পাঠায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর মধ্যে কয়েকটি মহাকাশযান সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করতেও ব্যর্থ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ‘ইউ এস সার্ভেয়ার-৪’ নামের মহাকাশযানটি চাঁদে নামার কিছুক্ষণ আগেই সমস্ত বেতার যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। শুধুই রাশিয়া আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেই এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমিত না। জাপান এবং চীনও তাদের নিজস্ব চন্দ্র-অভিযান প্রকল্প চালিয়েছিল। ১৯৯৩ সালে জাপানের চন্দ্রযান হিটেন চাঁদের মাটিতে আছড়ে পড়ে। এর পরে ২০০৯ সালে চীনের চ্যা-১ মহাকাশযানটিও চাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষে ধ্বংস হয়। ভারতও চাঁদে মহাকাশযান পাঠাবার চেষ্টা করেছে। ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর সকাল ৬টা ২২ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষিপ্ত হয় চন্দ্রযান-১। ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এটাই ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এতে কোনো মানুষ ছিল না, কেবলমাত্র একটি ইম্প্যাক্টর এবং একটি অরবিটর ছিল এই মহাকাশযানে। ২০০৮ সালের ১৪ নভেম্বর মুন ইমপ্যাক্ট প্রোবটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে। এই সমগ্র প্রকল্পটিতে ভারত সরকার মোট ৩৮৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল। এরপরে ২০১৯ সালে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’-র উদ্যোগে আবার একটি মহাকাশযান চাঁদে পাঠানোর পরিকল্পনা হয় এবং সেই অনুসারে ২০১৯ সালের ২২ জুলাই শ্রীহরিকোটা থেকে চাঁদের উদ্দেশ্যে উৎক্ষেপিত হয় মহাকাশযান। তবে এই অভিযানটি পূর্ণতা পায়নি। এভাবেই মানুষের চন্দ্র অভিযান বহাল রয়েছে। এখনো পর্যন্ত একশোটির মতো চন্দ্রযান পাঠানো হলেও মাত্র ১২ জন মানুষই চাঁদের মাটিতে পা রাখার বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।