সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি মিখাইল সের্গিয়েভিচ গর্বাচেভের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নজনের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখেছি। কারও কারও কাছে তিনি বদ্ধ সোভিয়েত সমাজব্যবস্থায় দখিনের জানালা, অর্থাৎ খোলা হাওয়া এনেছিলেন। কারও কারও চোখে তিনি স্রেফ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ক্রীড়নক হয়ে সমাজতন্ত্রের পতনের মূল কুশীলব। সেই বিতর্কে যাব না। কিন্তু কালের সাক্ষী হিসেবে যেহেতু খুব কাছ থেকে ঘটনা দেখেছিলাম, তাই স্বল্প কথায় বলতে চাই, সোভিয়েত সমাজব্যবস্থা কেন ব্যর্থ হলো।
নিঃসন্দেহে গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট শাসিত বদ্ধ সমাজকে মুক্ত বাতাসের সন্ধান দিতে চেয়েছিলেন। স্থবির ব্যবস্থার অচলায়তন ভাঙতে চেয়েছিলেন। অর্থনৈতিক মুক্তি আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সফল হননি। এ যেন দখিনের বদ্ধ দরজা খুলে খোলা হাওয়ার অপেক্ষা করে দমকা হাওয়ায় সবকিছু উড়িয়ে নেওয়ার মতো। পিরিস্ত্রোইকা ও গ্লাসনস্তের দমকা হাওয়ায় সোভিয়েত ব্যবস্থা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। পুঞ্জীভূত ক্ষোভ-আবেগকে খুব ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রিতভাবে বের করে দিতে হয়। ফুলে-ফেঁপে ওঠা জলকে বাঁধ দিয়ে রাখলে সেই বাঁধের জলকে নিয়ন্ত্রিতভাবে ছাড়তে হয়, বিজ্ঞান তা-ই বলে। তেমনি সামাজিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সত্যি। মনে রাখতে হবে অধিকারহীন, বাকস্বাধীনতাহীন মানুষ যখন হঠাৎ মুক্ত হাওয়ার স্বাদ পায়, তা কিন্তু নিয়ন্ত্রণ না করলে বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমাদের নিকট অতীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের পরেও কিন্তু এই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এমনকি রুশ বিপ্লবের পরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির একচ্ছত্র নেতা হিসেবে এ ব্যাপারগুলো তাঁর নিশ্চয়ই অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু সেই ভুলের মাশুল সোভিয়েত জনগণ তথা বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণকে দিতে হয়েছে এবং হচ্ছে।