‘চারদিন থাকি এটে (খোলা মাঠে) পরি আছি। গরিব মানুষ, জায়গা নাই কোটে যাই। আজকে বজরা বাজারের বাসিন্দা দূর সম্পর্কের জ্যাঠাতো ভাই টিটু মিয়া তার খুলিত (আঙিনায়) ঘর তোলার অনুমতি দিছে। দেখি ওটে যায়া আপাতত উঠি, তারপর মাবুদ দেখপে।’ চোখের পানি মুছতে মুছতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কালপানি বজরা এলাকার জহুর ব্যাপারীর ছেলে মোজাম্মেল হক (৬৫)। তার মতো অনেকেই হারিয়েছেন বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি।
কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে মানুষজন। কয়েকদিনে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে ৩টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে চলে গেছে ১ কিলোমিটার পাকা সড়ক, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদরাসা, পুরাতন বজরা বাজার, একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর।
সরেজমিন উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ভাঙন কবলিত সাতালস্কর, কালপানি বজরা ও পশ্চিম বজরা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন তাদের শেষ সম্বল ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। আবাদি জমি ও বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন।
এলাকাবাসী আব্দুল কাদের (৬৯), সাইফুল রহমান (৪৯),বায়েজিদ আলম (২৯) সহ অনেকে জানান, গত এক মাস যাবত ভাঙন শুরু হয়েছিল বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম কালপানি বজরা, সাতালস্কর ও কালপানি বজরা গ্রামে। উত্তরে জজমিয়ার বাড়ি থেকে দক্ষিণে রোস্তম মৌলভীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দু'কিলোমিটার এলাকা ব্যাপী ভাঙন শুরু হয়েছে। এরমধ্যে গত চারদিনে হঠাৎ করে ভাঙনের তীব্রতার ফলে বজরা পশ্চিম পাড়া দাখিল মাদরাসা, পুরান বজরা বাজার, ২টি মসজিদ, ১টি মন্দির, ২টি ঈদগাহ মাঠ, গাছপালা ও ২ শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারা আরও বলেন, ভাঙনের তীব্রতা এমনি ভয়াবহ ছিল যে গত মঙ্গলবার কমিউনিটি ক্লিনিক ও অর্ধশতাধিক বাড়ি মুহূর্তের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কোন রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছেন তারা।