বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ১৯৭৮ সালের ০১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। অবৈধ সেনাশাসক জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে। জিয়াউর রহমান জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ও একজন অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পরই আকস্মিকভাবে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। বন্দুকের নলে জিয়া প্রেসিডেন্ট হন। তার ক্ষমতা দখল পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালত দ্বারা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠজন ও তার সময়কার বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস-মার্শাল তোয়াব বঙ্গবন্ধু হত্যা সম্পর্কে ১৯৭৯ সালে জার্মানির ফ্র্যাংফুর্টে প্রদত্ত এক সাংবাদিক সাক্ষাৎকারেও বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রে জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেন।
তোয়াবের ভাষ্যমতে- ‘যুক্তি দিয়ে বিচার করলে এবং মানবিক দিক দিয়ে চিন্তা করলেও মুজিব হত্যার ব্যাপারে জিয়া সবচেয়ে বড় অপরাধী”। (সাপ্তাহিক জনমত, লন্ডন, ১ এপ্রিল ১৯৭৯)।
‘অ্যাট বঙ্গভবন: লাস্ট ফেজ’ (বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি) নামে স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থে এ নিয়ে রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম লিখেছেন, প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার আগ মুহূর্তে আমি জিয়াকে বলি, আমি যেহেতু নির্বাচন করে যেতে পারলাম না, আমি তাঁকে অনুরোধ করবো যেন তিনি নির্বাচন দেন। তিনি আমাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন। শুনে আমি খুশি হই। কিন্তু, আমি তখন ভাবতে পারিনি যে নির্বাচনে তিনি নিজেই অংশ নেবেন। সেরকম ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান থাকা অবস্থাতেই এবং সামরিক আইনের অধীনে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবেও, অর্থাৎ ক্ষমতাসীন হয়েই তিনি নির্বাচন করবেন এবং সেই নির্বাচনে নিজে অংশগ্রহণ করবেন এমন চিন্তা তখন আমার মাথায় আসেনি।’
বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর সেনা অভ্যুত্থানের পর জটিল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তিনি বঙ্গভবন ত্যাগ করেন।
রাষ্ট্রপতি সায়েমের বিশেষ সহযোগী বিচারপতি আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বে উপদেষ্টা কাউন্সিলের কতিপয় সিনিয়র বেসামরিক সদস্য ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার অনুরোধ করেন। তারা জানান, তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অধীনে তারা কাজ করতে চান। আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম লিখেছেন, ‘এরকম দুর্দশায় পড়ে আমি ভাবছিলাম, কোনোরূপ সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না করে আমি কীভাবে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে আসতে পারি। কারণ, আমি আমার পদত্যাগপত্র যাকে সম্বোধন করে লিখবো, সেরকম কেউ ছিল না। (সূত্র-বাসস, ৩১ আগস্ট ২০২২)
১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট সায়েমকে পদচ্যুত করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করে জিয়া সরকার। ওই ফরমানে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের নাগরিকরা অতঃপর বাঙালির পরিবর্তে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিত হবে।’ জিয়ার এই অপচেষ্টা ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করার রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র। [সূত্র– ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব: কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়’, আবদুল মতিন, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী]