বাড়ির বাইরে শিশুর প্রথম প্রিয় গন্তব্য তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাড়ির বড়রা সেখানে নেই। খেলার মাঠ, ফুলের বাগান, ফলের গাছ, বন্ধু, সহপাঠী—কত–কী! সকালে হাঁটতে বেরোলে এখনো দেখি, অনেক ছাত্রছাত্রী স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকে। ধীরেসুস্থে আসেন ‘চাবি মামা’ বা ‘চাবি খালা’। গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে একদৌড়ে ভেতরে ঢুকে যায় শিশুরা, যেন সারা রাত এই মুহূর্তেরই অপেক্ষায় ছিল।
আমাদের স্কুলে পাঠিয়ে বাড়ির অভিভাবকেরা খুব নিশ্চিন্ত থাকতেন। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে খুনসুটি, কখনো হাতাহাতি হতো, ক্লাসে দুষ্টুমি করলে শিক্ষকেরা বকাবকি করতেন। সীমা ছাড়িয়ে গেলে শারীরিক শাস্তি যে জুটত না, তা হলফ করে বলা যাবে না। কিন্তু মা–বাবাদের ভরসা ছিল ছেলেমেয়েরা স্কুলে যথেষ্ট নিরাপদ থাকবে।
সেই ভরসার গুড়ে কি এখন কেবলই বালি?
শিক্ষকদের হাত থেকে বেত নামিয়ে দেওয়ার পরও নানা অজুহাতে ছাত্রছাত্রীদের গায়ে হাত তোলার ঘটনা একদম বন্ধ হয়নি। গবেষণা বলছে, অনেক অভিভাবক এটাকে নিয়মসিদ্ধ মনে করেন। শারীরিক শাস্তির বাইরে বলাৎকার, যৌন নির্যাতন বা উৎপীড়নের ঘটনা মাঝেমধ্যে শোনা যায়।
গত বছর (২০২১) আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার অ্যান্ড গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, এক বছরের মধ্যে (মার্চ ২০১৯—মার্চ ২০২০) ১০টি দেশের প্রায় চার লাখ শিশু স্কুলে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। শিশুরাই গবেষকদের কাছে তাদের এই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষকেরাই এসব যৌন নির্যাতনের জন্য দায়ী। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অশিক্ষিত কর্মচারীদের হাতেও শিক্ষার্থীদের যৌন হেনস্তার অভিযোগ আছে। মারধর আর যৌন হেনস্তার বাইরে স্রেফ অবহেলা আর উদাসীনতার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আর নিরাপদ থাকছে না।