খেলাপি ঋণের কারণে আর্থিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব)-এমন মন্তব্য করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে। সেখানে আরও বলা হয়, বড় খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের হারও খুব কম। পাশাপাশি আমানতের বিপরীতে বেশি দেওয়া হয়েছে ঋণ অগ্রিম। এতে ব্যাংকের সুদ খাত থেকে আশাব্যঞ্জক আয়ও কমেছে। বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে অনিয়ম প্রতিরোধে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষাব্যবস্থা জোরদার, মূলধন ঘাটতি পূরণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াসহ ১৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ ব্যাংকের মূলধন ও আমানত ক্ষয়ে যাচ্ছে। সার্বিক ব্যবস্থাপনার মানও সন্তোষজনক নয়। এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় তহবিলসহ ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় বহন করছে না। জানতে চাইলে রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসাবে অতীতে কিছুটা দুর্বলতা ছিল। সেগুলো কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের। অগ্রিম ঋণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষক ও কৃষি ফসল উৎপাদনের স্বার্থে আরও বেশি অগ্রিম ঋণ বাড়ানো দরকার। ব্যাংকের দুর্বল আর্থিক ভিত্তি প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এর আগে অর্থবছরে যেখানে রাকাবের লোকসান ছিল ৪৮০ কোটি টাকা, সেটি কমিয়ে এ বছর ২৭২ কোটিতে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী দিনে এর পরিস্থিতি আরও ভালো হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কর্তৃক নিয়োজিত হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি পরিদর্শন টিম রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ওপর এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত তথ্যের পর ভিত্তি করে তা তৈরি করা হয়। এটি রাকাবের সার্বিক কর্মকাণ্ডের ওপর সর্বশেষ প্রতিবেদন। এর আগে ২০২০ সালেও বাংলাদেশ ব্যাংক রাকাবের ওপর পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। সেখানেও অনৈতিকভাবে ১৬৮ জনের পদোন্নতি, পেনশন ফান্ডের অব্যবস্থাপনা ও চাকরি কোটার অপব্যবহারসহ নানা ধরনের অনিয়মের সন্ধান পায়। শুধু তাই নয়, কর্মীদের বদলিতে অনিয়ম, অসৎ উদ্দেশ্যে ছয় বছর ধরে কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠ তালিকা প্রকাশ বন্ধ এবং জাল সনদে নিয়োগ দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আর আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতের প্রমাণ থাকার পরও শাস্তির পরিবর্তে পুনরায় চাকরিতে বহাল করা হয়েছে-এমন ঘটনাও ঘটেছে।