প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থান করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালাউদ্দিন। কাজ করছেন একটি ডাইং কারখানায়। মাসে বেতন পান দুই হাজার রিয়াল। ওভার টাইম আছে। ফলে সব খরচ বাদে মাসে দেড় হাজার রিয়ালের মতো থাকে। যার সিংহভাগ পাঠান দেশে।
কীভাবে এ অর্থ দেশে পাঠান— হোয়াটসঅ্যাপে জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। বলেন, কয়েকটা মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাই। এখানকার ব্যাংক থেকে দেশের ব্যাংকে অথবা বিকাশের মাধ্যমে। তবে, সহজ হয় হুন্ডিতে (নিষিদ্ধ অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থ স্থানান্তর ব্যবস্থা) পাঠালে।
‘প্রথমে ব্যাংকেই পাঠাতাম। রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতে ফরম পূরণ করতে হয়, অনেক সময় কাগজপত্রও দিতে হতো। এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগতো। ওদের কথাও বুঝা যেত না। একদিন রেমিট্যান্স পাঠাতে গিয়ে অনেক সময় চলে যায়। ফলে ওই দিন আর কাজে যেতে পারিনি। পরে এক বন্ধু জানাল, ঝামেলার দরকার কী, হুন্ডিতে পাঠা। তার কথা মতো পরের মাসে হুন্ডি করলাম। সঙ্গে সঙ্গে দেশে টাকা চলে গেল। রেটও ব্যাংকের চেয়ে বেশি পেলাম। এরপর থেকে হুন্ডিতে টাকা পাঠাই। মাঝে মাঝে ব্যাংকেও পাঠাই।’
হুন্ডিতে টাকা পাঠালে তো দেশের ক্ষতি— জানালে তিনি বলেন, ‘বুঝি, কিন্তু কী করব? আমরা তো এখানে কষ্ট করে টাকা কামাই। সেই টাকা পাঠাতে যদি ভোগান্তি পোহাতে হয় তখন আর ভালো লাগে না। আপনি বলেন, যেখানে ভোগান্তি কম কিন্তু টাকা বেশি; সেখানে কেন যাব না? কয়েক মাস দেশের টানে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছি। এখন বিরক্ত লাগে।’
সকাল ৮টায় কর্মস্থলে যাই, ফিরি রাত ৮টায়; মাঝে এক ঘণ্টার বিরতি খাওয়ার জন্য। এত কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠাই। অথচ খবরে শুনি দেশের সম্পদ লুটপাট হচ্ছে। আমাদের ঘামের টাকা তারা কেন লুটপাট করবে? এগুলো দেখলে আর দেশপ্রেম থাকে না— বলেন সালাউদ্দিন।
হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর সুবিধার কথা জানিয়ে এই প্রবাসী আরও বলেন, এখন ব্যাংকের রেট ২৭ টাকা (রিয়াল)। আড়াই টাকা প্রণোদনা যোগ হলে পাব ২৯ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু এখানে একটা চার্জ কাটে, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭০০ টাকা। তার মানে ২৯ টাকা ৫০ পয়সা পাচ্ছি না। অথচ হুন্ডিতে আজকের রেট ৩০ টাকা ৫০ পয়সা। টাকা বাসায় পৌঁছে দেবে। তাহলে কেন প্রবাসীরা ব্যাংকে টাকা পাঠাবে? রেমিট্যান্স পেতে হলে সরকারকে অবশ্যই ভোগান্তি কমাতে হবে। টাকা পাঠানো সহজ এবং হুন্ডির সঙ্গে ব্যাংক রেটের যে ব্যবধান তা কমাতে হবে। তাহলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারব আমরা।