সায়মা তানহা যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা, চিকিৎসক তাকে বললেন, “বি রেডি ফর সিজার”।
ডাক্তার প্রথমে বললেন, বাচ্চা উপরে উঠে গেছে। তারপর বললেন ‘উচ্চতা কম’ বলে সিজার দরকার। তানহা এখন বোঝেন, প্রয়োজন না থাকলেও তাকে আসলে সে সময় সি সেকশন (সিজারিয়ান সেকশন) করাতে বাধ্য করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের হিসাবে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অন্তত আট লাখ ৬০ হাজার সি-সেকশন হয়েছিল, এর ৭৭ দশমিক ১ শতাংশই ছিল ‘অপ্রয়োজনীয়’। আর ওইসব অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশনের পেছনে পরিবারগুলোর খরচ হয়েছে মোট ৩ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।
এরকম অপ্রয়োজনীয় সিজার বা প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার ( যা সিজারিয়ান সেকশন বা সি-সেকশন নামেও পরিচিত) ঠেকাতে ২০১৯ সালে হাই কোর্ট এক আদেশে সরকারকে ছয় মাসের মধ্যে একটি নীতিমালা করার নির্দেশ দিয়েছিল।
এরপর পেরিয়ে গেছে তিন বছর; সরকারের তরফ থেকে একটি খসড়া জমা দেওয়া হলেও বিষয়টি চূড়ান্ত করার কাজ থমকে আছে।
কোন কোন পরিস্থিতিতে সি-সেকশন করা যাবে, সে বিষয়েও দিক নির্দেশনা রাখা হয়েছে ওই খসড়া নীতিমালায়।
তবে বিষয়গুলো চূড়ান্ত করে আইনের অন্তর্ভুক্ত করা না হলে, সে অনুযায়ী বিধিমালা প্রণয়ন না হলে অপ্রয়োজনীয় সি সেকশন বন্ধে পুরোপুরি সফল হওয়া যাবে বলে মনে করেন না বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক মান্নান।
অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশন কী?
কথিত আছে, খ্রিস্টের জন্মেরও বহু আগে প্রাচীন রোমের অধীশ্বর জুলিয়াস সিজারকে মা আউরেলিয়ার পেট কেটে বের করা হয়েছিলো। সে কারণে স্বাভাবিক প্রসবের ব্যতিক্রম এ পদ্ধতিকে বলা হয় 'সিজারিয়ান', আর এ পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের বলা হয় 'সিজারিয়ান বেবি'।
সাধারণ নিয়ম হল, প্রসূতির শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে মা ও সন্তানের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেবেন চিকিৎসকরা। কিন্তু কিছু চিকিৎসক ও হাসপাতালের ‘অতিরিক্ত ব্যবসা করার মানসিকতার’ কারণে বিনা প্রয়োজনে সি সেকশনের পরামর্শ দেওয়া হয় বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
আবার সি-সেকশনের কারণে গর্ভাশয়ের ক্ষতি, অস্বাভাবিক প্ল্যাসেন্টেশন, এক্টোপিক গর্ভাবস্থা, ভ্রূণের মৃত্যু, সময়ের আগে শিশুর জন্মের মত ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। পাশাপাশি শিশুর হরমোন, শারীরিক ও অন্যান্য বিকাশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এ অস্ত্রোপচার৷