বঙ্গোপসাগরের তীরের জেলে আব্দুল লতিফ মাঝি। প্রায় দুই যুগ ধরে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরছেন। বছর দশেক আগেও কুয়াকাটা থেকে ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রে রেডিওতে দুর্যোগের সংকেত শুনতে পেতেন। তখন গভীর সাগর থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসতেন তাঁরা।
এখন বেতার তরঙ্গ (ফ্রিকোয়েন্সি) কম থাকায় সাগর থেকে অল্প দূরত্বেই সংকেত পাওয়া যায় না। তা ছাড়া বেশির ভাগ ট্রলারে এখন রেডিও নেই, মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও গভীর সমুদ্রে অচল। এই দুই কারণে গভীর সাগরে পৌঁছায় না দুর্যোগের বার্তা। তাই ঝড়ের কবলে পড়ছে মাছধরা ট্রলার, প্রাণ যাচ্ছে জেলেদের।
কুয়াকাটা, মহীপুর, আলীপুর, পাথরঘাটা, তালতলী জেলেপল্লীতে ঘুরে জেলেদের কাছ থেকে জানা গেছে, গভীর সমুদ্রে গিয়ে তাঁরা সম্পূর্ণরূপে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস সঠিক সময়ে পৌঁছায় না।
কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের গঙ্গামতি গ্রামের জেলে কালাম হোসেন। সমুদ্রে ইলিশ ধরেন ১৫ বছর ধরে। তিনি জানান, মহাজন তাঁদের ট্রলারে সংকেত শোনার জন্য রেডিও দেন না। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক একটা সময় পর আর পাওয়া যায় না।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আবহাওয়া একটু খারাপ কিংবা সাগর উত্তাল হলে জেলেরা ঠিকই বুঝতে পারেন। তাই জেলেরা ট্রলারে রেডিও নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। আবহাওয়ার পরিস্থিতি আঁচ করেই জেলেরা নিরাপদ আশ্রয় নেন। ’
বাংলাদেশ বেতার কিংবা বরিশাল বেতারের এফএম তরঙ্গ গভীর সমুদ্রে তো দূরের কথা, কুয়াকাটা, এমনকি বরগুনা পর্যন্তই ঠিকমতো পৌঁছায় না। অথচ এই দুই জেলায় সবচেয়ে বেশি জেলের বসবাস।
বঙ্গোপসাগরের পটুয়াখালী ও বরগুনা উপকূলের পাঁচ কিলোমিটারের পর থেকে সাগরে বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্রের ফ্রিকোয়েন্সি নেই। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকায় যে চারটি রেডিও স্টেশন রয়েছে, তা-ও সাগরতীরে অচল।