জ্বালানি-সংকট নিয়ে ভয়ের মধ্যে আছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশি ব্যবসার প্রতিযোগিতা সক্ষমতার মূল উপাদান হচ্ছে জ্বালানি। বর্তমান জ্বালানি–সংকটে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য কীভাবে এগিয়ে যাবে, সেটিই বড় বিষয়। একই সঙ্গে গত এক দশকে কার স্বার্থে দেশের গ্যাস অনুসন্ধান বন্ধ ছিল, সে প্রশ্নও তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করতে সরকারের কার্যকর হাতিয়ার নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নীতি সুদহার বাড়ালেও বাংলাদেশ ব্যাংকের হাত-পা নয়-ছয় সুদহারে বাঁধা।
জ্বালানি-সংকট নিয়ে ব্যবসায়ীদের ভয় আর মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের দুশ্চিন্তার বিপরীতে সরকারের প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ অনেকটাই নির্ভার। তাঁরা বলছেন, অর্থনীতিতে সংকট নেই, অস্বস্তি বা চ্যালেঞ্জ আছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী এক-দুই মাস মূল্যস্ফীতির চাপ থাকবে।
অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজনে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শারমিন রিনভী।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি বিচক্ষণতা প্রয়োজন। আমাদের দেশে অর্থনীতির ব্যবস্থাপনায় একধরনের আউট অব বক্স (বৃত্তের বাইরে) চিন্তা করা হয়। বলা হয়, আমরা ব্যতিক্রম। কিছু ভিন্নতা থাকলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির বেসিক একই। আর আমরা তো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন নই। ফলে আমাদের বুঝতে হবে, কখন কোথায় কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা আমরা খুব একটা গুরুত্বসহকারে নিই না। প্রথাগত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশে দক্ষ। তাঁরা দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিরুদ্ধ মন্তব্য করেছিলেন। করোনায় পাঁচ লাখ মানুষ মারা যাবে বলেও শঙ্কা ছিল তাঁদের। যদিও বাস্তবে তা হয়নি। অবশ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ হবে কি না, জানি না।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পরিকল্পিতভাবেই এগোচ্ছে। পরিকল্পনায় কোনো দুর্বলতা নেই। তবে দারিদ্র্য বিমোচনে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে একটু সময় বেশি লাগবে।