২১ আগস্ট ২০০৪ : রাষ্ট্র যখন ঘাতক

কালের কণ্ঠ আবদুল মান্নান প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২, ০৯:১৭

প্রতিবছরের মতো আবার এলো সেই ভয়াবহ ২১ আগস্ট। ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালের এই দিনে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় অফিসের সামনে এক পড়ন্ত বিকেলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরসহ হত্যা করার এক ঘৃণ্য চেষ্টা করা হয়েছিল। এই অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ছিলেন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই প্রসঙ্গে পরে আসছি।


সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে হাজির ছিলেন বিএনপির একজন সিনিয়র ব্যারিস্টার নেতা। মাসটা যেহেতু শোকের মাস, তাই কথায় কথায় ১৫ আগস্ট ও ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ইত্যাদি বিষয় এসে পড়ে। টিভির সব দর্শক-শ্রোতাকে অবাক করে দিয়ে বিএনপির সেই গুরুত্বপূর্ণ নেতা অবলীলাক্রমে বলে গেলেন, ১৫ আগস্ট ছাড়া দেশব্যাপী ২০০৫ সালে সব বোমা বা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল জেনারেল মইন উ আহমেদের ষড়যন্ত্র, যাতে তিনি এসবকে পুঁজি করে ক্ষমতা দখল করতে পারেন। তাঁর কাছ থেকে আরো জানা গেল, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ খন্দকার মোশতাক জারি করেছিলেন, যা তাঁর নেতা জিয়া বাতিল করেছিলেন। গায়ে চিমটি কাটলাম। ঠিক শুনছি তো। না, ঠিকই শুনছি। একটি রাজনৈতিক দল কতটুকু দেউলিয়া হলে এমন প্রলাপ বকতে পারে, তা চিন্তা করছি। আবার এই দলটি সামনের নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। জাতির কী দুর্ভাগ্য!


ফিরে আসি ২০০৪ সালের সেই ভয়াল ২১ আগস্টের বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার সেই ঘৃণ্য প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে। ১৯৭৫ সালের আগস্টের সেই কালরাতে শেখ হাসিনা বা তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার বেঁচে যাওয়া ছিল একটি দৈব ঘটনা, আর আল্লাহর রহমত। দুই বোনই জার্মানির উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন ৩০ জুলাই। দেশে থাকলে সত্যিকার অর্থেই শেখ মুজিব নির্বংশ হয়ে যেতেন, যা ঘাতকরা চেয়েছিল। না হওয়ার পেছনে হয়তো একটিই কারণ ছিল, আর তা হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা তাঁদের কারো হাত দিয়ে হয়তো পরবর্তীকালে মঙ্গল কিছু করাবেন। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্বপরিসরে এখন অন্য উচ্চতায়। তবে এখনো যে শেখ হাসিনা বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঘাতকদের হাত থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ, তা বলা যাবে না। প্রায়ই বিএনপির মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’। ২০০৯-১৩ সাল মেয়াদে বিএনপি যখন জাতীয় সংসদে ছিল তখন দলের একাধিক সংসদ সদস্য সুযোগ পেলে সংসদেই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ১৫ আগস্টের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। কয়েক দিন আগে শেখ হাসিনা পুনরুক্তি করেছেন যে তাঁর ও দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনো চলছে।


২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে, তখন থেকেই দেশে উগ্র ধর্মীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করে। সরকারি মদদে দেশকে বানাতে চায় একটি উগ্র জঙ্গি রাষ্ট্র। কিছুদিনের মধ্যেই হিযবুত তাহ্রীর, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি প্রভৃতি জঙ্গিগোষ্ঠী প্রকাশ্যে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করে। আফগানিস্তানফেরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তালেবানি যোদ্ধারা জাতীয় প্রেস ক্লাবে সভা করে স্লোগান দেয়—‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’। রাজশাহী-বগুড়া অঞ্চলে বাংলা ভাই আর শায়খ আবদুর রহমানের তাণ্ডবে মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। পুলিশের পাহারায় তারা মিছিল করে। জড়িত হয়ে তাদের মদদ দেন বিএনপি আর জামায়াতের স্থানীয় সংসদ সদস্যরা। খালেদা জিয়ার সরকার এসব বিষয়ে নির্বিকার। এসবের সঙ্গে সঙ্গে পর্দার অন্তরালে অন্য আরেক ভয়াবহ পরিকল্পনা রচিত হচ্ছিল খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের হাতে, আর তা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও সংসদে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার নীলনকশা প্রণয়নের কাজ। এই পরিকল্পনার সদর দপ্তর কুখ্যাত ‘হাওয়া ভবন’। তাঁকে সহায়তা করছিলেন দলের কয়েকজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা—যাঁদের মধ্যে ছিলেন—খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ সরকারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তা।


আওয়ামী লীগকে তখন কোথাও সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী সভা করার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঢাকার মুক্তাঙ্গন বরাদ্দ চেয়ে পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ প্রশাসন সেই বরাদ্দ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। আওয়ামী লীগ থেকে সমাবেশের দিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, মুক্তাঙ্গনের পরিবর্তে সমাবেশ হবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে, দলীয় কার্যালয়ের সামনে। পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো মঞ্চ তৈরি করা হয়নি। তার বদলে একটি ট্রাককে মঞ্চ বানানো হয়। যখন আওয়ামী লীগ সমাবেশের এসব প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ঠিক একই সময় শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আনছিলেন তারেক রহমানের পাঠানো ঘাতকরা। নেতৃত্বে ছিলেন হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, যা তিনি পরবর্তীকালে আদালতে স্বীকার করেছেন। সমন্বয়কারী ছিলেন আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মওলানা তাজউদ্দিন। কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তৃতা শেষে সবার পরে বক্তৃতা দেন শেখ হাসিনা।


বিকেল তখন পড়ন্ত। বক্তৃতা শেষে শেখ হাসিনা ট্রাক থেকে নামবেন, ঠিক তখনই পাশের বিভিন্ন ভবন থেকে বৃষ্টির মতো নিক্ষেপ হতে থাকল গ্রেনেড। কমপক্ষে ১৪টি। নিশানা শেখ হাসিনার ট্রাক আর সমবেত নেতাকর্মী। লক্ষ্য শেখ হাসিনা। ঠিক একই সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোড়া শুরু করল সমবেত জনগণের ওপর। মিনিটেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়ে গেল একটি ভয়াবহ মৃত্যুপুরী। চারদিকে আহতদের আর্তচিৎকার আর লাশের স্তূপ। দলের নেতারা একটি মানববর্ম তৈরি করে নিজেদের জীবন বাজি রেখে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করে তাঁকে তাঁর নিজস্ব জিপে তুলে দিলেন। আহতদের যেভাবে পারা যায় সেভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দেখা যায় সেখানে কোনো ডিউটি ডাক্তার নেই। তাঁদের আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। একেবারে নিখুঁত পরিকল্পনা। শুধু সেদিন ভাগ্যজোরে আর আল্লাহর রহমতে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সেদিনের ঘটনায় ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালে মোট ২৩ জন নিহত হন আর আহত হন প্রায় ৫০০, যাঁদের মধ্যে ৩০০ জন কোনো না কোনোভাবে পঙ্গু হয়ে যান।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us