সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের বার্ষিক মূল্যায়নে কাঙ্ক্ষিত স্বচ্ছতা আসছে না। বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের (এসিআর) বদলে বার্ষিক কর্মকৃতি মূল্যায়ন প্রতিবেদন (এপিএআর) লেখা ছাড়া স্বচ্ছতার কোনো সূচক তাতে যুক্ত হচ্ছে না। আগের এসিআর পদ্ধতির মতোই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধস্তনদের কাজের মূল্যায়ন করবেন তাঁদের ইচ্ছামতো।
এমন বিধান রেখে বার্ষিক কর্মকৃতি মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুশাসনমালা-২০২২-এর খসড়া আজ রবিবার প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য চূড়ান্ত হতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ বৈঠক হওয়ার কথা। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা অনুমোদন করবেন।
এপিএআরের খসড়া তৈরির আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এর নীতিগত অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। তখন কর্মকর্তাদের কর্মমূল্যায়নে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে বলা হয়েছিল।
এপিএআর পদ্ধতিতে কর্মকর্তাদের পেশাগত কাজের মূল্যায়নের জন্য থাকছে ৬০ নম্বর এবং ব্যক্তিগত মূল্যায়নে ৪০ নম্বর। বছরের শুরুতে করা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের বিষয়ে অধস্তনদের নম্বর দেবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে পেশাগত ৬০ নম্বরের মূল্যায়ন কর্মী দেখতে পারলেও ব্যক্তিগত ৪০ নম্বরের মূল্যায়ন গোপন থাকবে। জানার সুযোগ থাকবে না অধস্তনদের। এ জন্য সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারী আপিলও করতে পারবেন না।
অনুশাসনমালা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। পাঁচ বছর পর আজ অনুশাসন অনুমোদন হলেও বাস্তবায়ন শুরু হতে লাগবে আরো দুই বছর। কারণ অনুশাসন অনুমোদনের পর তার জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে শুরু হবে এর বাস্তবায়ন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শুরুতে শুধু প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের মূল্যায়নে এটি ব্যবহার হবে। এরপর প্রথম শ্রেণির সব কর্মকর্তাকে এর আওতায় আনা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এপিএআরের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বার্ষিক কর্মকৃতি মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন করা হবে। এর জন্য প্রত্যেকের কর্মভিত্তিক প্রফাইল থাকা প্রয়োজন। এটা না থাকায় বর্তমানে শুনে শুনে কর্মকর্তাদের বাছাই করতে হয়। কিন্তু এপিএআর চালু হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার প্রফাইল অনলাইনে দেখা যাবে।
বর্তমান এসিআরের পুরোটাই ব্যক্তিগত ও পেশাগত বৈশিষ্ট্যের মূল্যায়ন হয়। যেমন : ব্যক্তিত্ব, সময়ানুবর্তিতা ও সততার ২৫টি মানদণ্ড আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মচারী বছরব্যাপী কী কাজ করলেন, করলে ঠিকমতো করেছেন কি না তার মূল্যায়ন নেই। এসিআরের ১০০ নম্বরের পুরোটাই বৈশিষ্ট্যনির্ভর। বর্তমানে এসিআরের সময়কাল জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর। এপিএআরের সময়কাল হবে অর্থবছরকেন্দ্রিক জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত।