ধানে ধনী হওয়ার 'চাল'

সমকাল প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২, ০৮:৪২

হাজি আবদুল কুদ্দুস কুদু। বগুড়ার শেরপুরের চালকল মালিক সমিতির সভাপতি। তাঁর একারই ১০ গুদাম, সবক'টিতেই থরে থরে সাজানো ধানের বস্তা, আছে চালও। কত বস্তা! সেটার হিসাব হয়তো আবদুল কুদ্দুসেরও অজানা। তবে চালবাজি ঠিকই জানা। এই দুঃসময়ে তিনি ধান বেচেই ধনী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। সরকারি নিয়মে বলা আছে, গুদামে ধান মজুত রাখা যাবে সর্বোচ্চ ৩০ দিন আর চাল ১৫ দিন। নিয়মকে থোড়াই কেয়ার! শ্রমিকরাই বলছেন, তাঁর গুদামে গত বছরের ধানও আছে। জ্বালানি তেলের দর বাড়ার ছুতায় নতুন করে যখন চালের দামে হাওয়া লাগে, তখনই আবদুল কুদ্দুসের গুদামে পড়ে তালা। শুধু কুদ্দুসই নন; শেরপুরের সিরাজুল ইসলাম, হিটলার হোসেন, হাসেম আলী, আমিনুল ইসলাম মিন্টু, আলামিন হোসেন, গোলাম রব্বানীসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ধান-চাল ব্যবসায়ীর গুদামেও মজুত আছে হাজার হাজার বস্তা ধান-চাল।


অভিযোগ রয়েছে- উত্তরাঞ্চলের ধান-চালের অবৈধ মজুতদারদের কারণে চালের বাজারের দামের লাগাম টানা যাচ্ছে না। মজুতদারির কারণে উত্তরের বাজারে বাজারে কমেছে ধানের সরবরাহ। ফলে ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী। স্বাভাবিক সরবরাহ না থাকায় বেশি দামে ধান কেনার কারণে বাড়ছে চালের দাম। মজুতদারদের গুদামে আটকে থাকা হাজার হাজার মণ ধান বাজারে ছাড়লে চালের দাম কমে যেত বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা। ধান মজুতদারদের পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কিছু চালকল মালিকও অতিরিক্ত চাল মজুত করেছেন। দাম চড়তে থাকায় বাজারে এই চাল ছাড়া হচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে তৈরি হচ্ছে চালের সংকট। দেশের ধান-চালের বড় মোকাম দিনাজপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও বগুড়ার বাজার অনুসন্ধান করে মিলেছে এসব তথ্য।


সংশ্নিষ্ট জেলার খাদ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মজুতদারি রোধে অটো মিলগুলোর গুদাম পরিদর্শনসহ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। তবে বাস্তব ছবি একেবারেই উল্টো। এখনও উত্তরের অর্ধশতাধিক অটো রাইস মিলের গুদামে হাজার হাজার মণ ধান সংরক্ষিত রয়েছে বলে গোপন সূত্রে খবর মিলেছে। বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম খোরশেদ আলম খান বলেন, বেসরকারিভাবে কার কাছে কত ধান মজুত আছে, সে তথ্য বের করতেই হবে। কোথায় ধান মজুত আছে এবং কেন আছে- এটা সরকার সংশ্নিষ্টদের দেখতে হবে। তাহলেই চালের দাম কেন বাড়ছে, সেটার কারণ জানা যাবে।


মজুতদারিতে যাঁরা :বগুড়ার শেরপুর শহর থেকে আড়াই কিলোমিটার দক্ষিণে শেরুয়া বটতলা বাজার। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কসংলগ্ন এই বাজারের চারপাশেই চোখে পড়ে ছোট-বড় কয়েকশ চাতাল। রয়েছে অটোমেটিক রাইস মিলসহ বেশ কয়েকটি সেমিঅটো রাইস মিল। ওই বাজার থেকে মাত্র দুইশ গজ দক্ষিণে সামনে এগোলেই চোখে পড়ে বড় বড় চারটি চাতাল। চাতালের পাশেই গুদাম। অন্যপাশে দুটি সেমিঅটো রাইস মিল। চাতালে ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত জনাবিশেক নারী-পুরুষ। তাঁদের ওই মিল-চাতাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেন, এসবের মালিক হাজি আবদুল কুদ্দুস কুদু। তাঁর নিজের চারটি গুদাম আর ছয়টি ভাড়ায়।


শেরুয়া বটতলার আবদুল কুদ্দুসের মতো আরও যেসব ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাঁদের মিল ও চাতালেও দেখা গেল একই ছবি। সরকারি নিয়ম না মেনে অনেকে এক বছরের বেশি সময় ধরে গুদামে ধান-চাল সংরক্ষণ করে রেখেছেন। শেরপুরের আলাল অটোমেটিক রাইস মিল, উত্তরবঙ্গ অটোমেটিক রাইস মিল, শিনু অটোমেটিক রাইস মিল ও মজুমদার অটোমেটিক রাইস মিলে রয়েছে কয়েক হাজার বস্তা ধান ও চালের মজুত।


এ ব্যাপারে শেরপুর চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল কুদ্দুস কুদু বলেন, 'আমি দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা করছি। কখনও মজুতদারির ব্যাপারে আমাকে সমস্যায় পড়তে হয়নি। এখন বাজার খারাপ, তাই নানা রকম নিয়ম মানা হচ্ছে।' তিনি দাবি করেন, এই উপজেলার অনেক ব্যবসায়ীর কাছেই ধান-চাল আছে। তাঁরা বিক্রিও করছেন। তাঁদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us