২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) পরিকল্পিত সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিল। সেদিন বেলা ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ ছাড়া ৬৩ জেলার প্রায় ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে রাষ্ট্রকে হুমকি দিয়েছিল জঙ্গিরা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিদের বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি, আধা-সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ। মাত্র আধঘণ্টার ব্যবধানে চালানো সেই হামলায় ৫ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণে দুই জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছিল। দেশে জঙ্গি কায়দায় ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা করেছিল জেএমবি।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা নেওয়ার পর হাওয়া ভবন ও সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় সারা দেশে জঙ্গিবাদের ভয়াবহ বিস্তার ঘটে। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সরকারি এমপি-মন্ত্রীদের মদতে সারা দেশে শক্ত নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করে জঙ্গিরা এবং বাংলাভাইকে দেখা যায় সরাসরি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বসে মিটিং করতে। এই সিরিজ বোমা হামলা দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করলেও সেসময় চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মতিউর রহমান নিজামীসহ কয়েক মন্ত্রী বলেছিলেন, জঙ্গিবাদ মিডিয়ার সৃষ্টি। এসব বলে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করেছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের মদতে ৫৪টি উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গি সংগঠন এবং ইসলামি এনজিওর আড়ালে বিদেশি জঙ্গি-মৌলবাদী সংগঠন দেশব্যাপী সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক তৈরি করে। জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার বছরে করা অন্তত ২৬টি হামলায় ৭৩ জন নিহত এবং ৮০০ জনকে আহত করে। এ সময় হুজিও বেশ কয়েকটি নাশকতামূলক হামলা চালায়। জঙ্গি নেতা শায়েখ আবদুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান বাংলাভাইয়ের নেতৃত্বে জেএমবি রাজশাহীর বাঘমারা, নওগাঁর রানীনগর-আত্রাই এলাকায় নিজেদের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আত্রাইয়ে মানুষ মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখে।