কিছুদিন আগেও বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হতো। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জোর প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হয়েছে দেশে-বিদেশে। উন্নয়নের সে মডেল এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ জনগণের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়নি আশানুরূপ। মজুরি বৃদ্ধি গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে। জনসংখ্যা-পিরামিডের নিচের দিকে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্য মূল্যস্ফীতি একটি গুরুতর হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। ক্রমাগত চলতি হিসাবের ঘাটতি দেশের মুদ্রাকে দুর্বল করেছে অনেকটাই। বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ মহামারী থেকে উদ্ভূত নেতিবাচক প্রভাবের সঙ্গে অধুনা অর্থনৈতিক এ প্রতিকূল পরিবেশ লাখ লাখ মানুষকে নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ক্রমবর্ধমান ধারা বজায় রয়েছে, বিশাল জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান খারাপ হয়েছে সে কথা পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করে।
বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে সরকার এরই মধ্যে রিজার্ভ থেকে কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে ছেড়েছে। এতে সরকারের রিজার্ভ কমেছে বৈকি, কিন্তু টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকানো যায়নি। ব্যাংকগুলোকে টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করে দিলেও সরকারি বিনিময় হারে আমদানিকারকরাও এলসি খুলতে পারছেন না। বলা বাহুল্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া অর্থনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। তাই ঋণের জন্য সরকার এরই মধ্যে একাধিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চাওয়া। আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ প্রতিনিধিদের একটি দল এরই মধ্যে ঢাকা সফর করেছে। আলোচনাকে আরো এগিয়ে নিতে আরেকটি প্রতিনিধি দলের শিগগিরই ঢাকা সফরে আসার কথা।