একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সর্বপ্রথম যথাযোগ্য শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও আগামীর দেশ গঠনে তাদের অভাব জানানোর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি গণবাহিনীর উদ্দেশে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘বর্বর হানাদার শত্রুরা আমাদের সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের হত্যা করার জঘন্য প্রচেষ্টায় মেতেছিল। যেসব মনীষীরা আমাদের সমাজের উন্নতির পথ নির্দেশ করতে পারতেন সেইসব বুদ্ধিজীবী এবং দক্ষ জনশক্তিকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
আমরা অনেক অমূল্য প্রাণ হারিয়েছি। শুধু এই বিরাট ক্ষতি পূরণ করলেই হবে না, উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের নয়া দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।’ (সূত্র : ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সম্পাদিত, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, পৃষ্ঠা - ২৫)
ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে শুরু হয়েছিল বুদ্ধিজীবীদের সজাগ চলাফেরা। এরপর ষাট দশকের আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ উত্তরকাল এবং যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা আরও উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছিলেন।
একসাথে পথ চলতে চলতে দেশের শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অদৃশ্য শক্তিশালী ঢাল তৈরি করেছিলেন। যে যার পথে থেকেই তারা এক ধারায় বাহিত হয়েছিলেন, দেশকে স্বাধীন করার প্রত্যয় নদীতে। যে যার মতো দায়িত্ব পালন করে, এক দৃঢ় লক্ষ্যে সফল হওয়ার পরই আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূমি।
যদিও জোরপূর্বক প্রস্থান করতে হয়েছিল তাদের, নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। চিরপ্রস্থানে তারা বীরের বেশে অদৃশ্য ঢালের আড়ালে আমাদের বাঁচিয়ে রেখে গিয়েছিলেন।
বেদনার ঘন কুয়াশায় ভর করে অলৌকিক মানুষগুলো নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন তাদের প্রিয় নেতা এবং সম্মিলিত মানুষের নেতৃত্বে থাকা যেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা—বঙ্গবন্ধুর জন্য, বাংলাদেশের জন্য, আমাদের জন্য।
জাতির পিতা সেইসব অলৌকিক মানুষদের এক মুহূর্তের জন্য ভুলে যাননি। তাদের আদর্শ, কর্ম, অসাম্প্রদায়িকতা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনাকে আগামীর পথে তুলে ধরতে চেয়েছেন। শূন্যতা পেরিয়ে নতুন জনশক্তি গড়ার জন্য সচেতন হয়েছিলেন।
‘বুদ্ধিজীবীরা যে আদর্শের জন্যে জীবন দিয়ে গেছেন, সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের আত্মা শান্তি পাবে না। যতদিন বাংলার মানুষ পেট পুরে খেতে না পারবে, দেশ থেকে অত্যাচার-অবিচার দূর না হবে, আর শোষণমুক্ত সমাজ কায়েম না হবে, ততদিন শহীদদের আত্মা তৃপ্তি পাবে না।’ (সূত্র : দৈনিক বাংলা, ২৩ ডিসেম্বর ১৯৭২)