বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করার কথা ভাবছে সরকার। অথচ এক দিন বাড়তি ছুটিতে কতটুকু বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। এ অবস্থায় সরকারের এ ভাবনার সঙ্গে একমত নন শিক্ষাবিদেরা। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি বাড়লে করোনাকালে ছাত্রছাত্রীদের শেখার যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা আরও বেড়ে যাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বাজেট) মো. নূর-ই-আলম গতকাল শনিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি এক দিন বাড়লে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, এ বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তরকে আলাদা করে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেখান থেকে তারা বিদ্যুৎ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করে।’
বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ স্কুল ও কলেজে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া বাকি ছয় দিন পাঠদান হয়। আবার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চলমান সংকটের কথা উল্লেখ করে গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করা যায় কি না, সে বিষয়টা ভেবে দেখছি। আগামী বছর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন হবে। সেটাকে আমরা এ বছর থেকেই বাস্তবায়ন করব কি না, তা ভেবে দেখছি। এই মুহূর্তে কোনো সিদ্ধান্ত বলতে পারছি না। তবে আমরা এটা নিয়ে ভাবছি। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।’
শিক্ষাবিদদের ভাষ্য, করোনার কারণে দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময়ে শিক্ষার্থীদের শেখায় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এখন নিয়মিত সশরীরে ক্লাস হওয়ায় তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। হঠাৎ করে সাপ্তাহিক ছুটি বাড়ানো হলে শেখার ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।
শিক্ষার বিনিময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে শিক্ষাটা কি গুরুত্বপূর্ণ নয়? আগে সরকারের লোকজনকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সাশ্রয়ের উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। কিছু হলেই আগে প্রথম আঘাতটা শিক্ষার ওপর করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি বাড়ালে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, তা জনগণকে জানানো উচিত।’