অনেক দিন ধরেই ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ পরিচয়টি মলিন। সম্প্রতি ডিজেলের দাম বাড়ায় আরও বাড়তে যাচ্ছে বাঙালির খাবারের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ সেই মাছের দাম। মাছ আহরণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়বে মানুষের ক্রয়ক্ষমতায়। এতে মাছের বাজারে সংকট তৈরি হতে পারে। আর তাতে কর্মসংস্থান হারাতে পারেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকে।
মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ক্যাডেট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘মাছ আহরণের ক্ষেত্রে এখন শুধু ডিজেলের পেছনেই খরচ বেড়েছে ৪২ শতাংশ। এই হিসাবে মাছের দামও ৪২ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। কারণ মাছের দাম না বাড়লে জাহাজমালিকেরা লোকসানে পড়বেন। তখন তাঁরা মাছ আহরণ বন্ধ করে দেবেন। এতে বাজারে মাছের সংকট তৈরি হবে।’
প্রতিবছর গড়ে বঙ্গোপসাগর থেকে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে থাকা ২৬৩টির মতো স্টিল বডির ট্রলার দেড় লাখ মেট্রিক টন (প্রায় ১৬ শতাংশ) আহরণ করে। বাকি ৪ লাখ মেট্রিক টন মাছ ৬৭ হাজার মেকানাইজ ও নন-মেকাইনাজ নৌকা আহরণ করে। এসব মাছ ধরার ট্রলারে কাজ করেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ট্রলারমালিকেরা মাছ আহরণ বন্ধ করে দিলে এদের অনেকেই চাকরি হারাতে পারেন।
জানা গেছে, লাইসেন্সধারী ৪১ মিটার দৈর্ঘ্যের মাছ ধরার ট্রলারগুলো ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার পাওয়ার হর্সের মোটর দিয়ে চালানো হয়। প্রতিটি জাহাজে গড়ে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার লিটার ডিজেল প্রয়োজন হয়। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন এসব জাহাজে প্রতিদিন তেল খরচ বেড়ে যাবে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ২০ দিনের এক বয়েজে বাড়তি খরচ হবে ৩৪ লাখ টাকা।
শাহ আজিজ ডিপ সি ফিশিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুর রহমান বলেন, ‘বাসের ক্ষেত্রে তেলের দাম বাড়লে সরকার নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করে। কিন্তু নৌ-খাতে সরকারের কোনো নির্দেশনা নেই। এখানে মাছের দাম নির্ভর করে ফিশ পার্টির ওপর। অকশনে তারা যে দাম দেয়, সেই দামে জাহাজমালিকদের মাছ বিক্রি করতে হয়। এখন যে খরচ বেড়েছে, মাছ বিক্রির সময় আমরা সেই হিসাবে দর না পেলে আমাদের মাছ আহরণ বন্ধ করে দিতে হবে। লোকসান দিয়ে তো কেউ মাছ আহরণ করবে না।’