ভারতের সংবিধানের সূচনায় লেখা আছে, এই দেশ এক ‘সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’। আজকের ভারত সম্বন্ধে এই বিশেষণগুলোর একটাও ব্যবহার করা মুশকিল। ভারত অবশ্য কোনও কালেই ‘সমাজতান্ত্রিক’ ছিল না, যদি না কেউ রাষ্ট্রবাদের সঙ্গে সমাজতন্ত্রকে গুলিয়ে ফেলেন।
ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নটি জটিল, কিন্তু এখনকার রাষ্ট্রনায়কদের কথা ও কাজে স্পষ্ট যে, ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যে ‘নীতিগত ব্যবধান’ বজায় রাখার নীতিটিও আজকের ভারতে সম্পূর্ণ বিস্মৃত। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে বহু দশক ধরেই ক্ষয় ধরেছে, কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই ধ্বংস এমনই গতিশীল হয়েছে যে, সুইডেনের ভি-ডেম ইনস্টিটিউট ভারতকে বলেছে ‘ইলেক্টরাল অটোক্রেসি’ বা নির্বাচন-অনুমোদিত স্বৈরতন্ত্র।এই প্রবন্ধে আজকের ভারত নিয়ে যে কথাগুলি বলব, অনেকের কাছেই হয়তো তা খুব নেতিবাচক মনে হবে। তাই গোড়াতেই জানাই যে, স্বাধীনতার পর থেকে বহু ক্ষেত্রেই ভারত প্রভূত উন্নতি করেছে— আয়, প্রত্যাশিত গড় আয়ু, সাক্ষরতার হার বেড়েছে; পরিবহণ ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা-সহ অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির বহু দিকের উন্নতি ঘটেছে; বেসরকারি ক্ষেত্রের কিছু অংশ টগবগ করছে; প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে, ডিজিটাল ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে; অন্যান্য আর্থ-সামাজিক সূচকেরও উন্নতি হয়েছে।
জনসংখ্যার বেশির ভাগই এখন তরুণ, দেশ জুড়ে ব্যবসায়িক উদ্যোগের উদ্দীপনাও রয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার চমকপ্রদ উন্নতি ঘটেছে (প্রধানত, মোবাইল ফোন, সড়ক ও ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নতির ফলে)।কিন্তু, ভারতের বেশ কয়েকটি কাঠামোগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা রয়েছে, যা দেশকে তার সম্পূর্ণ ক্ষমতায় বিকশিত হতে দিচ্ছে না। এই প্রবন্ধে— এবং পরবর্তী সময়ে আরও একাধিক লেখায়— তেমনই কয়েকটি সমস্যাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করব। এই আলোচনায় মূলত দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলির কথাই বলব, অতিমারির মতো কারণে যে তীব্র কিন্তু সাময়িক সমস্যাগুলি তৈরি হয়েছে, এই লেখায় সেই প্রসঙ্গে বিশেষ ঢুকব না।