গজফিতা দিয়ে বেড়ানোর আনন্দ মাপা যায় না। বাড়ি থেকে গলির মোড়ের চায়ের দোকানের পদযাত্রাও হয়ে উঠতে পারে ঐতিহাসিক ভ্রমণ। সুতরাং সদল নাকি নির্দল, অবান্ধব বেরিয়ে পড়বেন, তা আর প্রধান বিবেচ্য নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভ্রমণসঙ্গী। কিছুদিন আগে পাখি নামে এক বন্ধুর সঙ্গে কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামুদ্রিক প্রাণী ধরেছিলাম। বিন্দু বিন্দু প্রাণী রাতের অন্ধকারে আমাদের সাদা ওড়নায় ছোটাছুটি করেছিল। কাছাকাছি থাকা ফোকলা দাঁতের এক ঝিনুককুড়ানি কন্যা খিলখিল করে হেসে বলেছিল, পানির লবণ যে!
এই বোকা হওয়া যে কতখানি আনন্দের, সে বর্ণনা এই মাপা শব্দকাঠামোয় দেওয়া কঠিন। এতটা বোকা হতে পারা মানে, মন তখন জটিলতাকে শত্রু ঘোষণা করেছে। এ ঘটনার বহু আগেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সূত্রে আমার বন্ধুটির পাসপোর্ট বহু দেশ ঘুরে পেটমোটা। তবে সব সময় তো আর এমন বন্ধু জোটে না। তখন শুরু হয় ভ্রমণকারীর ক্রান্তিকাল। বিশেষ করে আমাদের এ অঞ্চলের নারীদের জন্য একা ভ্রমণ মানে যেন ভাশুরের সামনে মাথার ঘোমটা পড়ে যাওয়ার মতো অপরাধ। আমরা দুই নারী বন্ধুও বহুবার তির্যক মন্তব্যের শিকার হয়েছি দেশের বিভিন্ন জেলা শহরেই। সেসব মন্তব্য মাথা পেতে নিয়েই মাঝিকে বলেছি, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে।’
বিকল্প অপেক্ষার সময় আমাদের ছিল না। অপেক্ষা করলে কোনো দিন বানিয়াচং হাওরের ভেতর উজিয়ে থাকা এক হাত সমান শুকনো জমিতে নীল ফড়িং দেখা হতো না। ভুটানের পুনাখার জংয়ের ফো আর মো নদী দেখতে গিয়ে সিদ্ধান্ত বদলে ভরদুপুরে অচেনা উপত্যকার মাঠে আকাশের নিচে শুয়ে থাকা হতো না। দূর থেকে তখন শুধু ভেসে এসেছে প্যাগোডার ঘণ্টাধ্বনি আর পাহাড়ের গায়ে আছড়ে পড়া বাতাসের শব্দ।