ঢাকার বাতাস ও ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ২০০০ সাল থেকে পরের ২০ বছরে ঢাকার তাপমাত্রা যেকোনো গ্রামাঞ্চলের চেয়ে ২ দশমিক ৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। মূলত রাজধানীর জনসংখ্যার উচ্চঘনত্ব, কংক্রিটের আচ্ছাদন বেড়ে যাওয়া, জলাশয় ও সবুজায়ন কমে যাওয়াসহ বেশ কয়েকটি কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। জনবহুল এ নগরীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, নাগরিকদের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণার তথ্য বলছে, তাপ সংবেদনশীলতার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীর চকবাজার, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, লালবাগ, পল্লবী ও শ্যামপুর।
শহরের কোনো এলাকার তাপমাত্রা ও ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা পার্শ্ববর্তী গ্রাম্য এলাকার চেয়ে অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেলে তখন সে অঞ্চলকে আরবান হিট আইল্যান্ড বা নগর দাবদাহ অঞ্চল বলে। রাজধানীর নগর দাবদাহ অঞ্চল এবং এর ঝুঁকির বিষয়গুলো নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি দল। গবেষণায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ৪১টি থানাকে ঝুঁকি বিবেচনায় পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। এতে দেখা গিয়েছে, অতি উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে ছয়টি, উচ্চঝুঁকিতে ১১টি, মধ্যম ঝুঁকিতে ১১টি, নিম্নঝুঁকিতে পাঁচটি এবং অতি নিম্নঝুঁকিতে রয়েছে আটটি থানা। এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ৮৭ শতাংশই আরবান হিট আইল্যান্ড বা নগর দাবদাহ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
তাপ সংবেদনশীলতার ঝুঁকি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে হিট ভালনারেবিলিটি ইনডেক্স (এইচভিআই) ব্যবহার করা হয়েছে। গত তিন দশকের তথ্য নিয়ে ২৬টি মৌলিক উপাদানের ভিত্তিতে এ সূচক তৈরি করা হয়। এতে থানা পর্যায়ের জনসংখ্যা, আর্থসামাজিক ও পরিবেশগত দিকগুলো বিবেচনায় নেয়া হয়। গবেষণায় তাপ সংবেদনশীলতার ঝুঁকির কারণ হিসেবে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জনসংখ্যার উচ্চঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রভাব, পানিস্বল্পতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দরিদ্রতাকে দায়ী করা হয়েছে। স্যাটেলাইট ছবি, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।