সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। ওডিশার আদিবাসী নারী। বাংলাদেশ রাষ্ট্র যার নাম দিয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। একই সাঁওতাল ভারতে আদিবাসী, আমাদের দেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। নামে কী আসে যায়। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর একজন নারী ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, এটি খুবই গর্বের বিষয়। বাংলাদেশের সাঁওতালরাও দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হওয়ায় আনন্দমিছিল করেছেন।
বাংলাদেশের মতো ভারতের রাষ্ট্রপতিও নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী নন। ক্ষমতাসীন দলের নীতি-আদর্শ ও কর্মসূচি তাঁকে অনুসরণ করতে হয়। এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে ভারতের রাজনীতি বেশ সরগরম ছিল। বিরোধী দলের প্রার্থী ছিলেন যশোবন্ত সিনহা। এককালের বিজেপির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী। এখন তিনি ওই দলের নীতি-আদর্শের ঘোর বিরোধী।
বিজেপি ভারতের রাজনীতিতে বরাবর তার প্রতিপক্ষকে টেক্কা দিয়ে চলেছে। এই প্রথম তারা একজন আদিবাসী তথা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করল। এর আগে অটল বিহারি বাজপেয়ীর আমলে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন প্রখ্যাত পরমাণুবিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম। বিজেপির হিসাব পরিষ্কার। আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাউকে রাষ্ট্রপতি করলে আগামী নির্বাচনে ওই সম্প্রদায়ের সিংহভাগ মানুষের সমর্থন পাওয়া যাবে।
দ্রৌপদী মুর্মুর বিজয়ের পর প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘বিজেপি কেন আলাদা, রাষ্ট্রপতি পদে সাঁওতাল দ্রৌপদী মুর্মুকে পছন্দ করা তার আরও একটা বড় প্রমাণ। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশ যে আদিবাসী জনগোষ্ঠী, তাদের আশা–আকাঙ্ক্ষা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে এমন কোনো পদক্ষেপ এত দিন কেউ নেয়নি। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার ও বিজেপি এখানেই অন্য সবাইকে টেক্কা দিয়ে গেল। সিদ্ধান্তটি ঐতিহাসিক।’
সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন রেখেছেন, কেমন হবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী, ব্যতিক্রমী না প্রতীকী? দলিত সম্প্রদায় থেকে আসা রামনাথ কোবিন্দ শেষ পর্যন্ত প্রতীকীই ছিলেন। আর ব্যতিক্রমী ছিলেন এ পি জে আবদুল কালাম ও প্রণব মুখার্জি। যদিও শিবসেনার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শেষোক্তজন সমালোচিত হয়েছিলেন।
ভারত গত ৭৫ বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপতি বেছে নিয়েছে। দেশটির প্রথম মুসলিম রাষ্ট্রপতি ছিলেন জাকির হোসেন। এরপর ফখরুদ্দীন আলী আহমেদ। তাঁরা দুজনই কংগ্রেসের রাজনীতি থেকে আসা। শিখ ধর্মাবলম্বী জ্ঞানী জৈল সিংও। কিন্তু আবদুল কালাম ছিলেন নির্দলীয়। তাঁকে ভারতের পরমাণবিক অস্ত্রের জনক বলা হয়। সবশেষে বিজেপি রাষ্ট্রপতি পদে বেছে নিল একজন সাঁওতাল নারীকে। দ্রৌপদী মুর্মুর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল রাজ্য সরকারের করণিক হিসেবে, পরবর্তী সময় তিনি কাউন্সিলর ও বিধানসভার সদস্য হয়েছেন। রাজ্যপাল হন। এখন ১৪০ কোটি মানুষের দেশের রাষ্ট্রপতি।