এক সময় ঢাকার সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এলাকাগুলোর একটি ছিল এখনকার শেরেবাংলা নগর। এ কারণেই জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণের জন্য এলাকাটিকে বেছে নেয়া হয়েছিল। এলাকাটির সৌন্দর্যের বড় উৎস ছিল এখানকার জলাশয়গুলো। বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই আই কান ষাটের দশকে এলাকাটির মাস্টারপ্ল্যানও তৈরি করেছিলেন জলাশয়গুলোকে কেন্দ্র করে। জলাশয়গুলোর সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে সে মহাপরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পরও দীর্ঘদিন এলাকাটির জলাশয়গুলোর সৌন্দর্য নগরবাসীকে দীর্ঘদিন মুগ্ধ করেছে। কিন্তু এক পর্যায়ে সংস্কারের নামে লুই আই কানের মহাপরিকল্পনাটি বদলে ফেলা হয়। এলাকাটির জলাশয় ভরাট করে গড়ে তোলা হয় একের পর সরকারি দপ্তর ও অবকাঠামো। চলতি শতকের শুরুতেও এলাকাটিতে বড় জলাশয় ছিল সাতটি। ভরাট, দখল ও অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের ফলে এর চারটিই এখন বিলুপ্ত। তিনটি আংশিকভাবে টিকে থাকলেও সেগুলোকেও এখন ভরাটের পরিকল্পনা চলছে।
যেকোনো নগরীর জন্য অপরিহার্য উপাদান হলো জলাশয়। নগরীর পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিতে এর কোনো বিকল্প নেই। পানি নিষ্কাশনের পাশাপাশি ধুলাবালির দূষণ নিয়ন্ত্রণ, অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং স্থানীয় প্রতিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের সুরক্ষা দেয়ার জন্য নগরে জলাশয় নির্মাণ ও সংরক্ষণ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রেক্ষাপটে নগরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য জলাশয়ের উপস্থিতিকে অপরিহার্য হিসেবে দেখছেন তারা। এজন্য বিশ্বের সবখানেই এখন নগর পরিকল্পনায় পর্যাপ্তসংখ্যক জলাশয়ের উপস্থিতি ও এগুলোর সংরক্ষণকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, যার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। অপরিকল্পিত উন্নয়ন, দখল ও দূষণে ভরাট হয়ে পড়ছে জলাশয়গুলো। এরই এক বড় উদাহরণ শেরেবাংলা নগরের ভরাট হয়ে পড়া জলাশয়গুলো।