গত ৩০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট। প্রথম আলো কুড়িগ্রাম নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে আমরা যা দেখলাম, কুড়িগ্রামে দারিদ্র্য ঠিকই আছে, তবে এর ধরন বদলেছে। এখন অভাব ভিন্ন, খাদ্যের বদলে পুষ্টির অভাব দেখা যায়। রয়েছে মৌলিক চাহিদা পূরণে ঘাটতি। আরডিআরএসের জেলার প্রোগ্রাম ম্যানেজার জানিয়েছেন, মঙ্গা নেই তবে দুই ধরনের দারিদ্র্য আছে। একটি মৌসুমি দারিদ্র্য। জুন-সেপ্টেম্বরে বাড়িঘরে বন্যার পানি উঠলে গবাদিপশু মারা যায়, ঘরবাড়ি-ফসল নষ্ট হয়। ফলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে ও দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়। আরেকটি যাঁরা চরে বাস করেন, তাঁদের নাকি কোনো জমি নেই। তাই তাঁরা সব সময় দারিদ্র্যের মধ্যেই থাকেন।
অথচ এই বন্যার কারণেই কুড়িগ্রাম উর্বরতম জেলায় পরিণত হয়েছে। গরিবের মুখে মাছ জোটে। শত শত বছর ধরে বন্যায় বাস করা জনগণ বন্যায় দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায়! নাকি বন্যার দোহাই দিয়ে এনজিও ব্যবসা চালু রাখা যায়?
আর চরে যদি জমি না–ই থাকে, তাহলে নদীভাঙার শিকার হয়ে সারা দেশে যারা ছড়িয়ে পড়েছে; শত শত বিঘা জমির প্রভাবশালী মালিক, যারা শহর-নগরের বাসিন্দা, তাদের জমিগুলো কই গেল? জমি না থাকার গল্প তাই অবাস্তব। বরং হাজার হাজার বিঘা খাসজমি দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করে এজমালি সম্পত্তিতে পরিণত করা জরুরি। যেন এজমালি জমিগুলো গোখাদ্যের উৎস, জনগণের পুষ্টি চাহিদা ও জ্বালানির অভাব পূরণে ভূমিকা রাখে।
সরকারি এত উদ্যোগ, অর্ধশতাধিক এনজিওর হাঁস-মুরগির পালনে সহায়তা, তবুও কাজের মঙ্গা কাটল না কেন? মুঘল আমলেও তো বন্যা ছিল, ছিল ব্রিটিশ আমলেও। তবু কীভাবে চিলমারী গোটা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে লিভারপুল আর গ্লাসগোর সঙ্গে তুলনীয় ছিল।
যে প্রশিক্ষণ ও প্রকল্পগুলো সরকারি উদ্যোগে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর পরবর্তী ফলাফল কী? দেশের ভেতরে-বাইরে অর্থনীতিতে তার কী ভূমিকা?
কর্মসংস্থানে জনপ্রতিনিধিদের স্বজনপ্রীতি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে প্রকল্পের টাকা ফেরত, ভিজিএফ বিতরণে অনিয়ম, ভাগাভাগির দৃশ্য তো গোটা দেশেই। তাহলে কুড়িগ্রামে এই অভিযোগ কেন? এও দারিদ্র্যেরই লক্ষ্মণ।