বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) অনিয়ম সামাল দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ব্যাংকটির পরিচালকদের সঙ্গে দুই দিন আলোচনায় বসেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় তিনি ব্যাংকটি পরিচালনায় শক্ত ভূমিকা পালনের বার্তা দেন পরিচালকদের। চুক্তি করে ব্যাংকটিকে সঠিক পথে পরিচালনার ইঙ্গিতও ছিল তাঁর বক্তব্যে।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে, পরিচালকেরা এনবিএলের কার্যক্রমে অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে প্রয়োজনে এর পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে। নিয়োগ করা হবে প্রশাসক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম মেনেই ব্যাংক পরিচালনা করতে হবে।
জানা গেছে, বর্তমান গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করার পর ন্যাশনালসহ কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরই অংশ হিসেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ১৮ জুলাই এনবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) চিঠি দেয়। চিঠিতে এনবিএলের সার্বিক আর্থিক অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা মূল্যায়নের জন্য ২৪ জুলাই এক পর্যালোচনা সভায় যোগ দিতে বলা হয়। ওই সভায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান, এমডি ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাকে (সিএফও) উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই গত ২৪ জুলাই দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকে যান ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান পারভীন হক সিকদার, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান নাইমুজ্জামান ভুঁইয়া, পরিচালক খলিলুর রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন এবং এমডি মেহমুদ হোসেন। পরদিন ২৫ জুলাই বেলা ১১টায় ব্যাংকটির পরিচালক রন হক সিকদার ও এমডি মেহমুদ হোসেন গভর্নরের সঙ্গে সভা করেন। এতে রন হক সিকদারের সঙ্গে একজন বিদেশি পরামর্শকও যোগ দেন।
উভয় সভায় গভর্নর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহীকে জানিয়ে দেন, নিয়মের মধ্যে থেকেই ব্যাংক চালাতে হবে। ইতিমধ্যে ব্যাংকটির যে খারাপ অবস্থা হয়েছে, তা সামাল দিতে তিন বছর মেয়াদি একটি সমঝোতা চুক্তি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে তিন বছরে কীভাবে উন্নয়ন করা যাবে, তা উল্লেখ থাকবে। এ চুক্তিতে ব্যাংকটির সব পরিচালককে সই করতে হবে। ২০১৪ সাল থেকে ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির এমডি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে সভা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একে একে ১০ ব্যাংকের সঙ্গে এ রকম সভা হবে। তবে কোন কোন ব্যাংকের সঙ্গে সভা হবে, তা জানি না।’