‘আমার তো রোজই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে হয়! না খেলেই পেটে গ্যাস জমে।’—এমন দাবি অনেক রোগীই করেন। অনেকে আবার বলেন, ‘আমাকে তো অন্য ওষুধ খেতে হয়, তাই সঙ্গে একটা গ্যাসের ওষুধও খাই।’ ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের মতো অনেকে এভাবে ওমিপ্রাজল বা এই গোত্রের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে খেয়ে যাচ্ছেন। এই অভ্যাস কি ভালো? দীর্ঘ মেয়াদে এসব ওষুধ সেবনে কি কোনো সমস্যা হতে পারে?
সাধারণত মানুষ পেটের যেকোনো সমস্যাকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলে ধরে নেন। তাঁদের মধ্যে আবার অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজে নিজে অথবা ওষুধের দোকানের কর্মীদের কথামতো নানা জাতের অ্যাসিড নিরোধক ওষুধ দিনের পর দিন খেয়েই যাচ্ছেন। পেট ফাঁপা বা অ্যাসিডিটির উপসর্গের জন্য এসব ওষুধ দিনের পর দিন খাওয়ার কি আদৌ প্রয়োজন আছে? এসব ওষুধ কতটা নিরাপদ? উত্তর হলো—প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর গোত্রের এসব ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খাওয়ার দরকার নেই এবং সেটা বিপজ্জনকও বটে! নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা হলেই কেবল চিকিৎসক এসব ওষুধ স্বল্পমেয়াদে দিয়ে থাকেন। এমনকি পেপটিক আলসারেও এসব ওষুধ দুই থেকে তিন মাস খেলেই রোগ ভালো হয়ে যায়।
দীর্ঘদিন এসব ওষুধ খেলে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে—
১. পাকস্থলীর অ্যাসিড মানব শরীরের প্রয়োজনেই তৈরি হয়। বেশ কিছু খাবারের হজমপ্রক্রিয়ার জন্য পাকস্থলীর অ্যাসিড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দিনের পর দিন এবং বেশি মাত্রায় অ্যাসিডরোধী এসব ওষুধ খেলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. পাকস্থলীর অ্যাসিড আমাদের খাবারের সঙ্গে থাকা জীবাণু অনেকাংশেই ধ্বংস করে। তাই এসব ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণ একেবারে কমে যায়। ফলে বারবার পরিপাকতন্ত্রে কিছু সংক্রমণ হতে পারে, যেমন: টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ইত্যাদি। কমে যেতে পারে পরিপাকতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।
৩. আমাদের শরীরের রক্ত তৈরি হতে কাঁচামাল হিসেবে যে আয়রনের প্রয়োজন হয়, সেই আয়রন শোষিত হওয়ার জন্য পাকস্থলীর অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়। কাজেই দীর্ঘমেয়াদি অ্যাসিড নিরোধক ওষুধ খেলে ব্যাহত হয় আয়রন শোষণ, পরিণতিতে দেখা দিতে পারে রক্তশূন্যতা।