গ্রাম থেকে দুজন মেহমান এসেছেন। দুপুরের খাবার সেরে ক্ষাণিকটা বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে তাদের নিয়ে বেরুলাম। গন্তব্য সংসদ ভবন,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ‘আইনসভা’। মিনিট দশেকের মধ্যে খামারবাড়ি হয়ে আমরা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় গিয়ে পৌঁছলাম।আড্ডা দিলাম প্রায় ঘন্টা দুয়েক। চমৎকার একটা বিকেল কাটিয়ে আমরা যখন বাসার পথ ধরলাম বিপত্তিটা ঘটলো ঠিক তখনই। এক যৌনকর্মীর অনভিপ্রেত প্রস্তাবনায় আমাদের সরব মুখগুলো নিমিষেই নিস্তবদ্ধতায় পর্যবসিত হলো। এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আজকাল দর্শণার্থীদের প্রায়শই পড়তে হয়। সংসদ ভবন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় স্থাপনাগুলোর অন্যতম একটি। দেশ পরিচালনার সিদ্ধান্তগুলো আসে এখান থেকেই। গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর কারণে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রতিদিনই এখানে আসেন সময় কাটাতে। বিশেষ করে বিকেল হলেই নানা বয়সী মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় পুরো এলাকাটি। এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা অথচ এখানেই কিনা যৌন কর্মীদের বিড়ম্বনা? সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও তাদের ভূমিকা নিষ্ক্রিয়। বলা চলে, তাদের নাকের ডগার ওপর দিয়েই চলছে ভাসমান পতিতাদের বিনা পুঁজির ব্যবসা! সংরক্ষিত এলাকা বলতে কি বুঝায় ? বিশেষ নিরাপত্তার মাধ্যমে একটি এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা, তাইতো? যদি তাই হয় তাহলে কীভাবে গণিকারা নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে থেকেই অবাধে যৌন ব্যবসা করেন? প্রশ্ন সচেতন সমাজের কাছে।সন্ধ্যা নামলেই সংসদ ভবনসহ তার আশপাশের ফুটপাতে বোরকা-নেকাব পরিহিত এক বিশেষ বেশভুষার নারী দেখা যায়। যাদের দেখলেই চেনা যায় কারণ এরা স্বাভাবিকতার ঊর্ধ্বে,এরাই উল্লিখিত পতিতা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে এদের দেখা মেলে সংসদের সামনে। বিশেষ করে অধিবেশন না থাকলে নীরব থাকে পুরো সংসদ এলাকা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মতো করে এলাকাটি ব্যবহার করছেন যৌনকর্মীরা। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ জন যৌনকর্মী খেজুরবাগান মোড় থেকে আসাদগেট পর্যন্ত ফুটপাতে ঘুরাঘুরি করেন। সাধারণত, খেঁজুরবাগানের পশ্চিম পাশের সংসদ ভবন সংশ্লিষ্ট দিকটি অনেকটা অন্ধকার থাকায় অধিকাংশ যৌনকর্মী এখানেই অবস্থান নেন। জানা যায়,সন্ধ্যার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে যৌন গ্রাহকেরা এখানে এসে থাকেন। দরদাম হয়, কথা চূড়ান্ত হলে যৌনকর্মীদের নিয়ে গ্রাহকরা যান আবাসিক হোটেল কিংবা বাসা বাড়িতে। এভাবেই সন্ধ্যার পর থেকে বিকিকিনি চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। অন্য অনেক জায়গা থাকতে এখানেই কেন তাদের ব্যবসা করতে হয় জানতে চেয়েছিলাম এক যৌনকর্মীর কাছে। ঢাকা শহরের অনেক জায়গার চেয়ে এই স্থানটিই নাকি অনেক বেশি নিরাপদ, ঝুঁকিহীন। ফলে গ্রাহকদেরও সাড়া মেলে ভাল। তার ভাষ্য মতে, ‘আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কোনো রকম ঝামেলা করি না, আমাদের প্রতি তাদের বিশ্বাস আছে, তাই গ্রাহকরা এখানে আসেন। সংসদের দক্ষিণ প্লাজার মতো প্রায় একই চিত্র উড়োজাহাজ মোড় থেকে উত্তর প্লাজার পুরো লেকরোডজুড়ে। আর চন্দ্রিমা উদ্যানে তো কথাই নেই। তাদের মতো অসংখ্য যৌনকর্মী রয়েছে আমাদের দেশে। যাদের বিরাট একটা অংশ দেশের প্রায় ২০ টি পতিতালয়ে অবস্থান করছেন। আর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রয়েছেন সংসদ এলাকার পতিতাদের মতো ভাসমান। ইউএনএইডস এর ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদন মতে,সারাদেশে নিবন্ধিত পতিতা রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার। আর সব মিলিয়ে মোট পতিতা রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। আর ২০১৯ সালে এসে সেই সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। মজার বিষয় হলো আমাদের সংবিধান বলছে, রাষ্ট্র জুয়া ও পতিতাবৃত্তি প্রতিরোধ করবে। অথচ আমাদের দেশে পতিতাবৃত্তি আইন সিদ্ধ অর্থাৎ বৈধ। তাই বলে সংসদ ভবনের মতো মহান-পবিত্র স্থাপনার সামনে পতিতাবৃত্তি কতোটা শোভনীয়? বিভিন্ন সময়ে পতিতাদের উৎখাতে অভিযান চালানো হলেও স্থায়ীভাবে কেন তাদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না বিষয়টি বোধগম্য নয়। দর্শণার্থীদের ভোগান্তি দূরীকরণে এবং মহান জাতীয় সংসদের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখতে অতি সত্বর পতিতাদের উচ্ছেদ জরুরি।এমএসএস, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।