মহামারীর ধাক্কা সামলে ওঠার পথে ঋণ প্রবাহ বাড়লেও আমানত সেভাবে বাড়েনি, এর মধ্যে ডলারের বাজারের অস্থিরতা সামলাতে গিয়ে নগদ টাকার সংকটে পড়ছে কোনো কোনো ব্যাংক; যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে।
ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে এক দিনের জন্য ধার করা অর্থের সুদের গড় হার বা কলমানি রেট জুলাইয়ের শেষে এসে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছে। অথচ এক বছর আগে তা ছিল ২ শতাংশ; গত ডিসেম্বরে ছিল ৩ শতাংশের ঘরে।
আর ৭ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য ধার নিতে ব্যাংকগুলোকে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুণতে হচ্ছে। ব্যাংক খাতের এই তারল্য সংকট আমানতের সুদ হারকেও বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।
ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলছেন, গত কয়েক মাস ধরেই তারল্য কমছে ব্যাংক খাতে।
বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যা করছেন এভাবে: আমদানির চাহিদা বাড়ায় ব্যাংকগুলোকে ডলার কিনতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। গত ১৩ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে।
ডলারের দাম বাবদ বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা এই সময়ে ব্যাংকগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে গেছে। সেই ডলার দিয়ে ব্যাংক গ্রাহকের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে।
কিন্তু গ্রাহক সাধারণত তাৎক্ষণিকভাবে ওই ডলারের দাম শোধ করেন না। আমদানি বিলের বিপরীতে ব্যাংকে একটি ঋণ তৈরি করা হয়, যা গ্রাহক পরে শোধ করেন।
সেলিম আরএফ হোসেন বলছেন, ব্যাংক খাতের অতিরিক্ত তারল্য এভাবেই ধীরে ধীরে কমে গেছে। এর মধ্যে আবার বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে, সরকারও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া শুরু করেছে। অথচ আমানতের প্রবৃদ্ধি সেভাবে হয়নি।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার রেপো শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে ব্যাংকগুলোর এখন বেশি সুদ দিতে হচ্ছে।
আবার ব্যাংকগুলোকে আমানতকারীদের সুদ দিতে হচ্ছে মূল্যস্ফীতির হারের ওপর হিসাব করে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় আমাদের সুদ হারও বাড়ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক আমানতের সুদ হার ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করেছে।
সব মিলিয়ে পুরো ব্যাংক খাতেই সুদহার বেড়ে গেছে বলে সেলিম আরএফ হোসেনের ভাষ্য।