একটা সময় ছিল যখন সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মুখে মধু তুলে দিতে নানি-দাদিদের কতই-না আয়োজন ছিল। কেউ রুপার বাটি-চামচ তো কেউবা সোনার বাটি-চামচ নিয়ে হাজির হতেন। কিন্তু বর্তমানের সচেতন দাদি-নানিরা প্রাধান্য দেন মায়ের বুকের প্রথম শালদুধ খাওয়ানোর বিষয়টিকে। কারণ এখন তাঁরা জানেন, সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্য আদর্শ খাবার মধু বা পানি নয়; বরং এ-জাতীয় খাদ্য শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
মায়ের দুধ শিশুর জন্য সুপার ফুড। শিশুর জন্য মায়ের দুধ রোগ প্রতিরোধের প্রথম টিকা। মায়ের প্রথম দুধে ‘কোলোস্ট্রাম’ থাকে। এর স্থায়িত্বকাল তিন থেকে চার দিন। ঘন, হলুদাভ এই কোলোস্ট্রাম নবজাতকের পরিপাকতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে এবং মায়ের দুধ হজম করার জন্য শিশুর হজম প্রক্রিয়াকে প্রস্তুত করে। ফলে এই কোলোস্ট্রাম শিশুকে খাওয়ানো বাধ্যতামূলক।
এই কোলোস্ট্রাম হলো মায়ের দুধের প্রথম ধাপ। এটি সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে শিশুর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করে। কোলোস্ট্রামের পর সামান্য কম ঘনত্বের যে দুধ আসে, সেটি হলো ‘ট্রানজিশনাল’ দুধ। এর স্থায়িত্বকাল ৪ থেকে ১০ দিন। শিশুর জন্মের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে মায়ের বুকে পরিপক্ব দুধ আসতে শুরু করে। এই দুধ শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত সব ধরনের পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে সক্ষম।
বেশির ভাগ শিশু জন্মের পর প্রথম তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে অল্প পরিমাণে ওজন হারায়। এটি মায়ের দুধ খাওয়ানোর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু সঠিকভাবে মায়ের দুধ খাওয়ানোর সঙ্গে শিশুর হারানো ওজন ফিরে আসার সম্পর্ক আছে।
সে জন্য বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞরা ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কোনো কিছু না খাইয়ে শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে পরিবারগুলোকে উদ্বুদ্ধ করেন। একে বলে এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং। ছয় মাস পর মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার
যোগ করতে হয়। মায়ের দুধে শিশুর জন্য ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, শর্করা, পানি ও চর্বি প্রায় নিখুঁত পরিমাণে মিশ্রিত আছে। এটি শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। এসব জিনিস অন্য কোনো ফর্মুলা ফুডে নেই।