বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশও বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে মার্কিন ডলার নিয়ে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে উচ্চমূল্যে কাঁচামাল ও জাহাজ ভাড়ার কারণে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, যার দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিরাপদ রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাহিদা-জোগানের মধ্যে সমন্বয় করতে না পেরে দফায় দফায় ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। সংকট এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, ব্যাপক চাহিদার কারণে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে খোলা বাজারে ডলারের দাম গিয়ে ঠেকেছে ১১২ টাকায়।
খোলা বাজারের সঙ্গে ব্যাংকের ডলারের দরের ব্যবধান কমানোর লক্ষ্যে দর নির্ধারণের ভার ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। সম্প্রতি সেই ব্যবধান আবার ৯-১০ টাকায় পৌঁছে গেছে। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
ডলারের এমন সংকট দেশের অর্থনীতির প্রায় সব খাতেই বিরূপ প্রভাব ফেলছে। দ্রুত ডলারের দাম বাড়ায় বিলম্বে এলসি নিষ্পত্তির (ডেফার্ড এলসি) ক্ষেত্রে অধিকাংশ আমদানিকারককে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। ডলার সংকটে সরকারের জ্বালানি ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগের ফলে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। এতে করে শিল্পের উৎপাদন কমে গেছে। আবার ডলারের দর বাড়ায় বেড়ে গেছে উৎপাদন ব্যয়। অনেক কোম্পানি লোকসানে পড়েছে। আমদানিতে বেশি মূল্যে ডলার কিনতে হওয়ায় পণ্য মূল্য আরও বাড়ছে, যা বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। সরকারি কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প কাটছাঁট করতে হয়েছে। ডলারের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি বিরূপ প্রভাব ফেলছে পুঁজিবাজারেও। বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে দেশের বাজার ছাড়ছেন, যার চাপ সামলাতে না পেরে নিয়মিত পতনের ধারা থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। ডলার বাঁচাতে বিলাসী পণ্যে নিয়ন্ত্রণমূলক কর বাড়ানো ও সম্পূর্ণ নগদ অর্থে এলসি খোলার ঋণপত্র বাধ্যবাধকতায় বিলাসী পণ্য বিক্রিতেও ধস নেমেছে।