স্নাতক পর্যায়ে অর্থনীতি পাঠের সময় আমাদের পাঠ্যগ্রন্থ ছিল মিশিয়েল হেনরিক ডি ককের 'সেন্ট্রাল ব্যাংকিং'। ডি কক নিজেই দক্ষিণ আফ্রিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হলো প্রবৃদ্ধিকে সহজতর ও ত্বরান্বিত করা। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অস্ত্র হলো মুদ্রানীতি। মুদ্রানীতির দুটি বাহক হচ্ছে সুদ ও বিনিময় হার। দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি তথা জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিংবা উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এতে অর্থনীতিতে ব্যাপকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়; অর্থনীতির সক্ষমতা বাড়ে এবং অর্থনীতির পরিসর বা ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, মুদ্রানীতি অনেকাংশে ভালো কাজ করেছে; সুদের হারের উত্থান-পতনের মাধ্যমে বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতাকে সহায়তা করেছে। উপরন্তু বাজারের নিজস্ব নির্যাতন পদ্ধতি থেকে গরিব মানুষ, শ্রমিককে রক্ষা করার ক্ষেত্রেও মুদ্রানীতি বেশ কাজ করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, মুদ্রানীতির পাশাপাশি পরিপূরক রাজস্ব নীতিও প্রয়োজন।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে দেখতে পেয়েছি, উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে শুধু সুদের হার কমালেই বিনিয়োগ বাড়ছে না। বিনিয়োগ বাড়াতে অনেক সময় অর্থকে সহজলভ্য করতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সুদের হার কমানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সত্যিকার উদ্যোক্তারা সহজেই অর্থ পাচ্ছে কিনা এবং সত্যিকারের উদ্যোক্তার কাছে অর্থটা পৌঁছাচ্ছে কিনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেখা গেল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতিকে আরও সম্প্রসারণ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, মুদ্রানীতি প্রণয়ন, পর্যালোচনা, সুদ ও বিনিময় হারের নজরদারি শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হতে পারে না।