মেধা দিয়ে বিশ্বজয় করা জাতি একদিন মাথা তুলবে—এটাই নিয়ম। সমাজে ভারতবিদ্বেষ এখন তুঙ্গে। এর কারণ বা প্রভাব সবাই বোঝেন। একতরফা বাংলাদেশকে দায়ী করাও অনুচিত। দুটি দেশের সম্পর্ক যখন যে পর্যায়ে যেমন থাকুক না কেন, ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের অতীত জড়িয়ে। ইতিহাস ও পূর্বাধিকারের কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা মনে রাখতেই হবে।
যে কথা বলছিলাম, সারা বিশ্বে যে কয়েকটি জাতি মেধা দিয়ে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে, তাদের মধ্যে ইহুদিরা অগ্রগণ্য। কার্ল মার্ক্স থেকে আইনস্টাইন বা আজকের জাকারবার্গ—সবার ওই একটাই পরিচয়। জেনে অবাক হয়েছিলাম, সবচেয়ে বেশি নোবেলজয়ী এই জাতির মানুষেরা তাঁদের অর্জন দুইভাবে উৎসর্গ করেন। প্রথমত, তাঁদের জাতিসত্তার কাছে, তারপর তিনি যে দেশের নাগরিক তার উদ্দেশ্যে। ফিলিস্তিন দখল ও তাদের ওপর অমানবিক যুদ্ধংদেহী আচরণ আর অমানবিক নির্যাতনের কারণে আমরা ওই রাষ্ট্রের ভূমিকা সমর্থন করি না; বরং তাদের বিরুদ্ধে থাকি। তাই বলে অকারণ জাতিবিদ্বেষ বা তাদের ভালো দিক গ্রহণ না করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।
এমন আরেকটি জাতি ছিল শ্রীলঙ্কার তামিল জনগোষ্ঠী। তারাও সারা বিশ্বে মেধা দিয়ে জায়গা করে নিয়েছিল। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় তাদের আধিপত্য আর মেধার ঝলকানি চোখে পড়ার মতো ছিল একসময়। কিন্তু গৃহযুদ্ধে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তাদের ভূমিকা হয়ে উঠেছিল আত্মঘাতী। ভালো-মন্দ এমন কোনো জাজমেন্টে না গিয়েই বলব, তারা অকাতরে টাকা পাঠিয়ে নিহত প্রভাকরণ আর তামিল টাইগারদের শক্তি জোগাত। সেই যুদ্ধের ফলাফল কী হতে পারে, সেই ধারণা থাকার পরও উগ্র জাতীয়তাবাদ ও স্বজাতির কষ্ট-দুঃখ-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তারা যে ভূমিকা নিয়েছিল, তা ইতিহাসে গৌরবের কিছু বলে বিবেচিত হবে না। ফলাফলে তামিলদের স্বাধীনতার স্বপ্ন তো চুরমার হয়েছেই, সারা দুনিয়ায় ভাবমূর্তির সংকট আর পরাজয়ের গ্লানি তাদের পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।