জার্মান-আমেরিকান মনস্তত্ত্ববিদ এরিক এরিকসন ১৯৬৩ সালে তাঁর ‘চাইল্ডহুড অ্যান্ড সোসাইটি’ বইটিতে কিশোর অপরাধের কারণ লিখতে গিয়ে বয়ঃসন্ধিকালের দুটি সমস্যার কথা আলোচনা করেছিলেন। তাঁর সাইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট থিওরির পঞ্চম ধাপ ‘ইগো আইডেনটিটি’ আর ‘রোল কনফিউশন’ নিয়ে আলোচনার ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, বয়ঃসন্ধিকাল মানুষের পরবর্তী জীবনের ব্যক্তিগত আইডেনটিটিকে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, এই কিশোর বয়সেই তারা স্বাধীনতাকে আবিষ্কার করে, যা নিজের সত্তা নির্মাণে সহায়তা করে।
উপযুক্ত অনুপ্রেরণা এবং ইতিবাচক অভিজ্ঞতা যেমন একজন কিশোর বা কিশোরীর ব্যক্তিসত্তাকে গঠন করে, আবার এর অভাবে তাদের মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। মনস্তত্ত্ববিদেরা আরও মনে করেন, বয়ঃসন্ধির শেষ দিকে জৈবিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে পরিবার বা বিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে স্বাধীন হওয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর ছাত্রদের দ্বারা শিক্ষক পিটিয়ে হত্যা বা লাঞ্ছনার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কারণে কিশোরদের মনস্তত্ত্ব এবং অপরাধপ্রবণতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। শ্রীপুরের হত্যার ঘটনাটিতে অভিযুক্ত কিশোরের ‘হিরোইজম’ প্রকাশ বা নড়াইলে শিক্ষককে জুতার মালা পরিয়ে দেওয়ার উচ্ছ্বাসের ভয়ংকর মানসিকতাকে তাই আর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই; বরং এই উঠতি বয়সের কিশোরদের এমন নির্মম ও অপরাধপ্রবণ হওয়ার কারণ সন্ধানের প্রয়োজন এখন সময়ের দাবি।
কিশোরদের অপরাধপ্রবণ হওয়ার পেছনে সাধারণত যে ছয়টি বিষয় পরিলক্ষিত হয় তা হলো—দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য সুরক্ষার অভাব, পারিবারিক সমস্যা, নিম্নমানের জীবনযাপনের পদ্ধতি, অপর্যাপ্ত শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার। আর এ বিষয়গুলোকে আলাদাভাবে গবেষণা করার সময়কাল খুব বেশি দিনের নয়। শিশু-কিশোরদের আলাদা একটি সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে দেখা অপেক্ষাকৃত একটি নতুন ধারণা।