বাংলাদেশে সমস্যার অন্ত নেই; অনেক সমস্যাই গুরুতর। দুটি সমস্যা অত্যন্ত প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে- একটি প্রাকৃতিক, অন্যটি মানবিক। বন্যা, খরা, নদীভাঙন ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণে আজ আমরা অত্যন্ত বিপন্ন। মানবিক সমস্যাগুলোর ভেতর একটি হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। শাসক শ্রেণি চাইছে, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হোক। এর পেছনে রয়েছে তাদের দুরভিসন্ধি। তারা মনে করে, এ দেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাদের লক্ষ্য যত দ্রুত পারা যায় দেশের যা কিছু অর্থ-সম্পদ আছে, তা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করা। তাদের স্থায়ী নিবাস অন্য দেশে, ভিন্ন গোলার্ধে। ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা লুটেরা রাজনীতিকদের প্রধান তৎপরতা হলো লুণ্ঠনের। এ লক্ষ্যে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শ্রমদাস বানানোর সহজ উপায় খোঁজে। এ কাজে তাদের জন্য দুটি প্রশস্ত পথ খোলা আছে। প্রথমত, পোশাকশিল্পে সস্তায় শ্রমিক জোগান দেওয়া এবং এই খাতের রপ্তানি থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পুনর্বিনিয়োগ না করে উল্টোপথে বিদেশে পাচার করা বা জালিয়াতির মাধ্যমে একটা বৃহৎ অংশ বিদেশেই রেখে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, বিদেশের বাজারে শ্রমিক রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার নামে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করা।
জনসংখ্যার আধিক্য ও দারিদ্র্যের কারণে এখানে সস্তায় শ্রম-শোষণ সহজ বলে পোশাকশিল্পের এই রমরমা বাণিজ্য, যার পুরোটাই শ্রমিক শোষণের ওপর নির্ভরশীল। এটা বিদেশি ক্রেতারাও ভালো বোঝে। অন্যদিকে জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলোতে সস্তায় শ্রম কে দেবে? বাংলাদেশের দরিদ্র জনশক্তিই তাদের ভরসা। বাংলাদেশি অদক্ষ শ্রমিকরা বিদেশে নিম্নমানের, বিপজ্জনক ও অমানবিক কাজ করে, যা অন্য দেশের শ্রমিকরা করতে সম্মত হয় না। তারা রক্ত-ঘামে ঝরা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠায়। কিন্তু সে মুদ্রা আত্মসাৎ করে ধনীরা।
চীনের সরকার যদি 'এক সন্তান নীতি' গ্রহণ না করত, তাহলে তাদের জনসংখ্যা ইতোমধ্যে দ্বিগুণের অধিক হতো। তারা কঠোরতার সঙ্গে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করে। ফলে জন্মহারে এক পর্যায়ে স্থিতি আসে। আজ চীন বিশ্বের সবচেয়ে আর্থিক ও সামাজিকভাবে সচ্ছল দেশে পরিণত। এই সাফল্যের পেছনে প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতির ভূমিকা অনস্বীকার্য।