বিদায় হজের ভাষণ নবিজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, মানবতার ঐতিহাসিক দলিল, ইসলামের পরিপূর্ণতার স্বীকৃতি এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে কোরআন-সুন্নাহর সংক্ষিপ্ত সারমর্ম। তাকওয়ার ভিত্তিতে মানবতাবোধসম্পন্ন জাতি গঠনে এ ভাষণের গুরুত্ব অপরিসীম।
বিদায় হজ : রাসুলুল্লাহ (সা.) নবুয়তপ্রাপ্তির পর মক্কায় অবস্থানকালে দুইবার হজ পালন করলেও মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর দশম হিজরিতে একবারই হজ করেন। সেটিই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র আনুষ্ঠানিক হজ এবং শেষ হজ, যা বিদায় হজ নামে পরিচিত।
কাতাদা (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসুল (সা.) কতবার ওমরাহ আদায় করেছেন? তিনি বলেন, চারবার। তন্মধ্যে হুদায়বিয়ার ওমরাহ জুলকাদা মাসে, যখন মুশরিকরা তাঁকে মক্কায় প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিল। পরবর্তী বছরের জুলকাদা মাসের ওমরাহ, যখন মুশরিকদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। জিরানার ওমরাহ, যেখানে নবী (সা.) গনিমতের মাল, সম্ভবত হুনায়নের যুদ্ধে বণ্টন করেন। আমি বললাম, আল্লাহর রাসুল (সা.) কতবার হজ করেছেন? তিনি বলেন, একবার। (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৮)
বিদায় হজের ভাষণের প্রেক্ষাপট : রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজে লক্ষাধিক সাহাবির সামনে দশম হিজরির জিলহজ মাসের ৯ তারিখ বিকেলে আরাফাতের ময়দানে এবং পরদিন ১০ জিলহজ কোরবানির দিন বক্তব্য পেশ করেছিলেন। এই দুই দিনে দেওয়া তাঁর বক্তব্য বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ হিসেবে পরিচিত। নবী (সা.)-এর দৃঢ় আশঙ্কা ছিল যে এটাই তাঁর জীবনের সর্বশেষ হজ ও সর্বশেষ বিশ্ব সম্মেলন। জীবনের সর্বশেষ সম্মেলন হিসেবে তিনি পুরো দ্বিন-ইসলামের সারাংশ তুলে ধরেছেন এই ভাষণে। এটিই ছিল তাঁর নবুয়তিজীবনের উপসংহার। ভাষণ শেষে ভাবের আতিশয্যে নবী (সা.) নীরব হন। জান্নাতি নূরে তাঁর চেহারা আলোকদীপ্ত হয়ে ওঠে। এই মুহূর্তে নাজিল হয়—‘আজকের এই দিনে তোমাদের দ্বিনকে পূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করে দিলাম। ইসলামকেই তোমাদের ওপর দ্বিন হিসেবে মনোনীত করলাম। ’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৩)