মাস্ক পরা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করছি। ঘটনাটি সপ্তাহখানেক আগের। ছুটির দিনে গিয়েছি বাজার করতে, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড-নিয়ন্ত্রিত এক বাজারে। পুরো বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা অধিকাংশের মুখেই নেই কোনো মাস্ক। মাছবাজারে উপচে পড়া ভিড়। ভিড় ঠেলে যাই পরিচিত এক মাছ বিক্রেতার দোকানে। আমার মাস্ক পরা দেখে তিনি মুচকি হাসেন। প্রথম বুঝতে পারিনি হাসির কারণ। জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ‘স্যার, দেশে কি করোনা আছে। এখনো মাস্ক পরেন আপনি। এই যে দেখেন কারও মুখেই মাস্ক নেই। বড় বড় লোকও মাস্ক খুলে ঘুরছেন। সরকারের কর্তাব্যক্তিরাও মাস্ক ছাড়াই মিটিং করছেন এখন। দেখবেন কয়েক দিন পরেই মাস্ক চলে যাবে জাদুঘরে।’ এই দোকানিকেই করোনার ঊর্ধ্বগতির সময়টায় মাস্ক পরা নিয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছিলাম। আর এখন সে-ই উপদেশ দিচ্ছে মাস্ক না পরার পক্ষে। দোকানির কথার শক্ত কোনো জবাব ওইদিন দিতে পারিনি। কেননা মার্কেটপ্লেস, বাসস্ট্যান্ড, পরিবহন কোথাও এখন মাস্ক পরা ব্যক্তি তেমন খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরং কাউকে মাস্ক পরা দেখলে অনেকেই আড় চোখে তাকায়। যেন বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন তিনি। করোনার সংক্রমণ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের বিধিনিষেধ প্রায় উঠে গেছে। কিন্তু মাস্ক পরার বিধিনিষেধ থাকলেও সেটি আছে শুধুই কাগজে-কলমে। তাহলে সত্যিই কি মাস্ক চলে যাচ্ছে জাদুঘরে?
সপ্তাহ যেতেই করোনা যে আবার ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে সে খবর উঠে আসছে গণমাধ্যমে। যখন লিখছি তখন ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের, যা গত তিন মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু। আর পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এ ছাড়া দেশে দুই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের নতুন উপধরনের (সাব-ভ্যারিয়েন্ট) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের গবেষণায় দুই ব্যক্তির শরীরে ওমিক্রনের নতুন উপধরন (বিএ ৪/৫) শনাক্তের কথা বলা হয়। আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অথবা বুস্টার ডোজসহ টিকা নেওয়ার মাধ্যমে অ্যান্টিবডি অর্জনকারীদের শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিচ্ছে ভাইরাসটির নতুন উপধরন বিএ.৪ ও বিএ.৫, গবেষণা থেকে এমন তথ্য জানায় হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের বেথ ইসরায়েল ডেকোনেস মেডিকেল সেন্টারের গবেষক দল। বুধবার নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত নতুন ওই গবেষণাপত্রে তারা বলেন, আগে সংক্রমিত হওয়া থেকে অথবা টিকা গ্রহণের মাধ্যমে দেহে যে অ্যান্টিবডির সৃষ্টি হয় তার সক্রিয়তা করোনাভাইরাসের মূল ধরনের তুলনায় ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট বা উপধরন বিএ.৪ ও বিএ.৫ ধরনের বিরুদ্ধে কয়েক গুণ কম। ফলে এটি দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার ভয় রয়েছে।