অনেকেই বলেছিলেন, সম্ভব না। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সম্ভব—এবং তিনি করেও দেখালেন। আজ এলো সম্ভাবনার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যার জন্য অধীর আগ্রহে গোটা জাতি।
বহুল প্রতীক্ষা ও অনেক সাধনার পর ঠিক কোন বিশেষণে জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণকে উপস্থাপন করা সম্ভব, বুঝতে পারছি না। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বড় একটি কাজ করে দেখানো একই সঙ্গে আনন্দের, গর্বের ও সামর্থ্য প্রমাণের।
খুবই কি সহজবোধ্য ছিল নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণাটি? মোটেও না। তবে মনের জোরে অনেক অসাধ্য সাধন হয়ে যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন নিজেদের টাকায় এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন, তখনো অনেক ‘যদি’ ‘কিন্তু’তে ঘুরপাক খাচ্ছিল জাতির এই স্বপ্নের সেতুটি। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যার তেজোদীপ্ত অঙ্গীকার জাতিকে এই অমূল্য উপহার এনে দিয়েছে। তা-ও খুব অল্প সময়ে। এমন একসময়ে সেতুটির নির্মাণকাজ দুর্বার গতিতে এগিয়ে গেছে, যখন করোনাভাইরাস মহামারিতে স্থবির গোটা পৃথিবী। অথচ এই কঠিন প্রতিবন্ধকতাও পদ্মা সেতুর সামনে দাঁড়াতে পারেনি বাধার দেয়াল হয়ে।
একেবারে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে আপাদমস্তক সেতুটি। পদ্মা সেতুর গায়ে তুলির শেষ আঁচড়টি দেওয়ার পর গত সপ্তাহে জ্বলে ওঠে দুই পাশের বাতিগুলো। এতেই যেন সঞ্চারিত হলো প্রাণের স্পন্দন। তিল তিল করে গড়া আশার প্রদীপ যেন জ্বলতে শুরু করল এবার। একসময়ের অন্ধকার পল্লী আজ জ্বলজ্বল করছে পদ্মার আলোয়। আলোকিত হয়েছে চারপাশ। ডানা মেলতে শুরু করেছে দেখা-অদেখা উজ্জ্বল স্বপ্নগুলো। পদ্মা সেতুর ছবি দেখে মনে হয় যেন শিল্পীর গাঁথুনি দিয়ে একটু একটু করে বানানো একটি ক্যানভাস। এটি শুধু একটি সেতু নয়, আমাদের সামর্থ্যের স্মারক হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে বিশ্বকে একটি বার্তাও দিয়ে গেল, বাঙালি বরাবরের মতোই অদম্য। আমরা চাইলে সবই পারি।
তবে এই অসাধ্য সাধন হতো না, যদি না জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর সামনে এই অঙ্গীকার করতেন। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, কিভাবে অজেয়কে জয় করতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি বাঙালি জাতির সামনে বহুকাল প্রেরণা হয়ে থাকবে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, অনেক জেলার মানুষ এই প্রথম সড়কপথে পদ্মা পারাপার তথা রাজধানীর সঙ্গে যোগসূত্র রচনা করতে পারবে। শরীয়তপুরের মানুষ নিশ্চয়ই কখনো ভাবেনি উত্তাল প্রমত্তা পদ্মার ঢেউয়ে জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়াও নদী পারাপারের বন্দোবস্ত হবে কস্মিনকালেও!