আদি চিলমারী বহুকাল আগে ব্রহ্মপুত্র নদে গিলে চরে ছেড়েছে ইউনিয়ন করে। চিলমারীর উপজেলা পরিষদ বসেছে থানাহাটে। রেলস্টেশন সেখান থেকে মাইল দেড়েক দূরে রমনা বাজারে। ব্রহ্মপুত্রের গ্রাসে গিয়ে রেললাইনের এখানেই শেষ। ‘রমনা বাজার স্টেশন’ নামের এটাই চিলমারীর রেলস্টেশন। এই স্টেশনের নামেই লোকাল ট্রেন ‘রমনা’। কুড়িগ্রাম-রমনা করত সেকালে। পয়লাবার ছাড়ত কুড়িগ্রাম থেকে সকাল ৮টার কিছু আগে-পরে। রমনা থেকে শেষবার ছাড়ত বিকেল ৪টা কি ৫টার দিকে। সেই ট্রেন নাকি চলত শম্বুক গোত্রীয় কেন্নো পোকার মন্থর গতিতে (মঙ্গা এলাকার লাইনের দুর্গতির চলন্ত প্রমাণ একবারে)! প্রথম বগির কারও দরকার হলে জমিনে নেমে ‘জলত্যাগ’ করে দিব্যি উঠতে পারে শেষ বগিটাতে বলে কৌতুক করত লোকে! সবই শোনা কথা, আমার নিজের কখনো ওঠা হয়নি (টাইমে মিলত না বলে)। কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের বাকি উলিপুর-থানাহাট অংশটুকুতে হেরিং-বোন-বন্ড হয়ে যায় আমার যাওয়ার আগ দিয়ে। কুড়িগ্রাম-থানাহাট লোকাল বাস সার্ভিস চালু হয় মাত্র দিন কয়েক আগে।
কপালগুণে তাই বেঁচে গিয়েছিলাম আরও একখানা ‘ব্রেক’ থেকে! কুড়িগ্রাম থেকে চিলমারী পৌঁছাতে পেরেছিলাম একই লোকাল বাসে উঠে। তার আগে উলিপুরেই শেষ ছিল পাকা রাস্তা আর লোকাল বাস সার্ভিস। তখন চিলমারী যাওয়া-আসায় সাধারণের ভরসা কেবল ওই এক ট্রেন রমনা। চিলমারী উপজেলা কোর্টের মক্কেল-মোহরার, পেশকার-পেয়াদা, কেরানিরা অসাধারণ কেউ নয়। একসঙ্গে সবাই ভর করত ট্রেনটাতে। লোকাল বাস চালু হয়েছে তো কী হয়েছে! মায়া বসে তাদের গতিজড়তা থেকে গেছে রমনা ট্রেনেই! সেটাতে নাকি চলা যেত প্রায় মাগনাতে! গরিবানা কিছু বখশিশেই খুশি চেকার, টিকেট খুঁজত না খাতির করে (মঙ্গার দুঃখ বুঝত সরকারি লোকেও)! বখিল বাস-কনডাক্টর বোঝে না কিছুই, খাতির করে না ভাড়ায় এক পয়সাও! মক্কেল-মোহরার, পেশকার-পেয়াদা-কেরানিদের কোর্টে হাজিরার টাইম তাই আটকে থেকে গেছে ওই রেলের ঘণ্টাতেই! তার আগে ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে চরের তিনটা ইউনিয়নের মক্কেল আসে কী করে!