দেশে এই মুহূর্তে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৮, অদূর ভবিষ্যতে সংখ্যাটি আরো বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ আগেই বলেছিলেন যে প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা তাঁর লক্ষ্য। তাঁর সরকারের আমলেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দ্রুত বেড়েই চলছে। আগে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেকটাই স্থির ছিল।
সে কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দেশের কলেজগুলো এর অধিভুক্ত করা হয় এবং বাছবিচারবিহীনভাবে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর শিক্ষাক্রম কলেজগুলোতে চালু করা হতে থাকে। আবার নব্বইয়ের দশকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়া শুরু করে। সেটিও এখন শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষার মান এখন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্পসংখ্যক ছাড়া বাকিগুলোর শিক্ষার মানের আশা করা দুরূহ ব্যাপার। বেশির ভাগই সনদ বাণিজ্যে যুক্ত হয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একসময় শিক্ষার মান ধরে রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক উত্থান-পতনের কারণে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়কেই সেশনজটের দীর্ঘ সারিতে আটকে থাকতে হয়েছিল। দেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সে কারণে হতাশা বেড়ে যেতে থাকে। আবার বেসরকারি ও সরকারি কলেজগুলোরও অধীনে উচ্চশিক্ষার সুযোগ যেভাবে সম্প্রসারণ করা হয়েছে, তাতে উচ্চশিক্ষার মান এবং গুরুত্ব ওই দুই ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে হারাতে বসেছে। তেমন প্রেক্ষাপটে অপেক্ষাকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিবেচনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই প্রাধান্য পেতে থাকে। সে কারণে শিক্ষার্থীদের ভর্তির প্রথম পছন্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি সেটি যদি সবেমাত্র নির্মাণকাজে হাত দিয়েও থাকে। তাহলেও শিক্ষার্থীরা প্রথম বিবেচনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কেই বিবেচনা করে থাকেন। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার খরচ নিম্নমধ্যবিত্তদেরও নাগালের মধ্যে। তা ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবর্ষ বা শিক্ষা সেমিস্টার স্বাভাবিক নিয়মে শেষ করা হয়। অপেক্ষাকৃত মেধাবীদের শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি এবং শিক্ষাক্রম ও সহশিক্ষাক্রমে অংশ নেওয়ার পরিবেশ রক্ষা করার চেষ্টা হয়ে থাকে। কিছুসংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেশির ভাগেই এসবের অনুপস্থিতি দৃশ্যমান। সরকারি ও বেসরকারি বেশির ভাগ কলেজেই লেখাপড়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এবং উত্তীর্ণ হওয়ার নিয়মটি এগুলোতে এখন প্রধান বিবেচ্য বিষয় হতে দেখা গেছে। সে কারণে অপেক্ষাকৃত মেধাবীরা কলেজ পর্যায়ে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর শিক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এর ফলে নতুন নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাঁদের আগ্রহ বেড়ে যায়। ভর্তি প্রতিযোগিতা এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে যায়। এর ফলে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তীচ্ছুদের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরামহীনভাবে ছোটাছুটি করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই দুরবস্থার কথা বিবেচনা করেই গত চার-পাঁচ বছর থেকে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তির নতুন নিয়ম চালু হতে থাকে। এটি এখনো সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একক পদ্ধতি হিসেবে চালু হয়নি। চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলো বেশ আগেই সফলভাবে এর প্রয়োগ ঘটিয়েছে।