নাট্যকার মামুনুর রশীদের জনপ্রিয় টেলিভিশন নাটক ‘ঝগড়ালী’। কমেডি ধাঁচের নাটকটির প্রধান চরিত্র দুজন নারী। তাদের পেশা ভাড়ায় ঝগড়া করা। এ পেশায় তারা রীতিমতো খ্যাতিসম্পন্ন। জমিজমাসংক্রান্ত সমস্যা, শরিকে শরিকে গন্ডগোল—এ রকম বহু সমস্যায় তাদের ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়। ঝগড়া করে তারা মক্কেলদের জিতিয়ে দিয়ে আসে। তাদের চাহিদা এত বেশি যে উকিলেরা তাদের কাছে মক্কেল ধরে নিয়ে আসেন। পেশাদারত্বের ক্ষেত্রে তারা খুব উঁচু মাপের। মক্কেলদের সঙ্গে কথা বলা থেকে শুরু করে ভাড়ায় ঝগড়া করে দিয়ে আসা পর্যন্ত তাদের নির্দিষ্ট ফিস আছে। কোনো ক্ষেত্রে একটুও নড়চড় হওয়ার নয়। আমাদের দেশে পারিবারিক সমস্যাগুলো প্রায়ই ঝগড়া-গন্ডগোলে রূপ নেওয়ায় এবং বিচারব্যবস্থায় যে দীর্ঘসূত্রতা, তাতে পেশা হিসেব ঝগড়ালীকে বেশ সম্ভাবনাময় বলে মনে করেছেন নাট্যকার।
নাটকের পর্দায় নয়, বাস্তবেও সম্ভাবনাময় একটা পেশার আবির্ভাব ঘটতে দেখলাম। সেটা হলো ভোটকেন্দ্রে ভাড়া খাটা। রীতিমতো উঁচু মানের পেশাদারি, সেই সঙ্গে উঁচু দরের পেশা। অস্ত্র নিয়ে ভাড়া খাটতে হলে জনপ্রতি এক দিনের ফি ২০ হাজার টাকা। আর অস্ত্র বাদে হলে ১০ হাজার টাকা। আপাতত, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী, মহেশখালী—এ রকম কিছু এলাকায় ভোটের মাঠে ভাড়া খাটা এ ধরনের পেশাজীবীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আপাতত উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তারা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের দিন ভাড়ায় মাঠ দখলের কাজটি করে দেয়। দেড় বছর আগে চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে সত্যিকারের ক্রসফায়ারে পড়ে স্কুলপড়ুয়া এক কিশোর নিহত হয়। সেই হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) খুব কাকতালীয়ভাবে এ পেশার লোকদের সন্ধান পেয়েছে। এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষ হয়ে অস্ত্রসহ কিংবা নিরস্ত্র হিসাবে ভাড়া খেটেছে তারা।