ড. মাকসুদ হেলালি দেশের বিশিষ্ট অগ্নিনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক। বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাডভান্সড মেটেরিয়াল প্রসেসিং সেন্টার থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ড. মাকসুদ হেলালি বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-এর অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক অন্যতম সম্পাদক এবং অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ-এর অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক নীতিপ্রণয়ন এবং বিজিএমইএর অগ্নিনিরাপত্তা পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশের ইমারত নির্মাণ ও কলকারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলায় ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে মারাত্মক অগ্নিকান্ডের ঘটনা এবং হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের মতো রাসায়নিক দ্রব্যের অগ্নিনির্বাপণসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন ড. মাকসুদ হেলালি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের আহমেদ মুনীরুদ্দিন
দেশ রূপান্তর : আমরা প্রতি বছরই দেশে অনেক অগ্নিকান্ড ঘটতে দেখি। আগুনের ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হচ্ছে, সম্পদহানি ঘটছে। কিন্তু অগ্নিকান্ড বন্ধ হচ্ছে না। সাম্প্রতিককালে তাজরীন গার্মেন্টস, নিমতলী, চুড়িহাট্টা, সেজান জুসের কারখানায় ভয়াবহ আগুনের মতো অনেক অগ্নিকান্ড ঘটেছে। দেশে এত অগ্নিদুর্ঘটনার কারণ কী বলে মনে করেন?
ড. মাকসুদ হেলালি : বাংলাদেশে প্রতি বছর যে অগ্নিকান্ড ঘটে তার সংখ্যা ১৫ থেকে ২৫ হাজারের মধ্যে। এই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৯ সালে, ২৬ হাজার। গড়ে প্রতি বছর অগ্নিকান্ডের সংখ্যা ২০ হাজারের মতো। আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর অগ্নিকান্ডের সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বাংলাদেশের প্রায় দ্বিগুণ। সেখানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা আরও কম হওয়ার কথা ছিল। মৃত্যুহারের হিসাবেও বাংলাদেশে অগ্নিকান্ডের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার প্রতি ১০ লাখে ১০ জন এবং বাংলাদেশে ১ জন। রাশিয়ায় প্রতি ১০ লাখে মৃত্যুর হার ৭০ জন এবং ভারতে ১৬ জন। ফলে অগ্নিকান্ডের সংখ্যা ও মৃত্যুর হারের বিবেচনায় বাংলাদেশ যে তুলনামূলকভাবে খুব খারাপ অবস্থায় আছে এটা বলার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। অন্যভাবে বললে আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু কলকারখানা, শিল্পউৎপাদন সবখানেই আগুন অপরিহার্য, আগুন ছাড়া আমরা চলতে পারি না। কিন্তু এটাও ঠিক যে, দেশে যে পরিমাণ আগুনের ঘটনা ঘটে তার প্রায় ৬০ ভাগই ঘটে থাকে মানুষের ভুলের কারণে। অসাবধানতা, প্রশিক্ষণের অভাব এবং যথাযথ অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণ না করার কারণে।